বন্যায় ভেসে গেছে ফেনীর মাছ-মুরগির খামার
বিদেশ থেকে এসে এক বন্ধুকে নিয়ে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা শরিফ। বন্যায় তার চারটি পোল্ট্রি খামারে থাকা সাত হাজার মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার সবই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু সরিয়ে বাড়ির ছাদে রাখলেও সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়ায় মারা গেছে অনেক মুরগি। আর কিছু বিক্রি করে দিয়েছেন।
শরিফ জাগো নিউজকে বলেন, কোনোদিন বন্যা হয়নি এই এলাকায়। এরকম কিছু একটা যে এসে আমাদের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা ভাবতে পারিনি। সাত থেকে আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।
তিনি বলেন, আমরা পাইকারিভাবে পোল্ট্রির খাবার বিক্রি করতাম। যাদের কাছে বিক্রি করেছি তারাও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবদিকেই খারাপ সংবাদ।
বন্যায় ফেনীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের ঘের। সব মাছের ঘেরই ভেসে গেছে। এতে কোটি কোটি টাকা লোকশান গুনতে হবে এই এলাকার মাছের খামারিদের।
জগৎপুর এলাকার চারটি মাছের ঘের করেছিলেন অপি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বন্যার পানিতে আমিসহ আশপাশে যারা ঘের করেছেন সবই পানিতে ভেসে গেছে। মাছ সব বের হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে এলাকায়। মানুষজন জমিতে মাছ ধরে ঘেরের মাছ পাচ্ছে। আমার প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি চাষ করেছিলাম। সব শেষ।
আরও পড়ুন
- ফেনীতে এখনো কমেনি দুর্ভোগ
- কয়েক হাজার মানুষের পাশে স্থানীয় বিত্তশালীরা
- বন্যাকবলিত দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় খাবার সংকট চরমে
এছাড়াও এলাকার একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্যোগের কথা জানা যায়। এ অবস্থায় তাদের প্রতি সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখন ছিল ধান চাষের সময়। প্লাবিত এলাকার ধানের চারা সবই পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে ধান রোপণে জমি চাষ দিয়েছেন। কেউ রোপণও করেছেন। বন্যাপরবর্তী ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিনিয়োগের সবই পানিতে ভেসে গেছে তাদের। উদ্যোক্তাদের জমানো সব টাকাই বিনিয়োগ হয়েছে এসব খামারে। সব হারিয়ে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন তারা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গত রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে জানান, ফেনী ও সিলেটসহ দেশের ১১ জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৫৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যায় ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলা আক্রান্ত হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় জানমালের ক্ষতিসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এর ফলে অনেক গবাদিপশুর মৃত্যু এবং ভেসে যাওয়াসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য এবং অন্যান্য পশুখাদ্য বিনষ্ট হয়।
এএএম/বিএ/এমএস