নোয়াখালীতে কমছে পানি, এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ
গত দুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রায় চার ইঞ্চি পানি কমলেও এখনো ঘরবাড়ি ফিরতে পারছেন না বন্যা দুর্গতরা। এখনো ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে জেলার আকাশে আজ ঝলমলে রোদ। যা দুর্গত মানুষের মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতি কেটে যাবে বলে আমরা আশা করছি। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো আভাস নেই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, কোম্পানীগঞ্জে মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরের সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণ পানি সাগরে নিষ্কাশন হচ্ছে। জেলা শহর ও আশপাশের উপজেলায় ৩-৪ ইঞ্চি পানি কমেছে। এভাবে কমতে থাকলে ৩-৪ দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে, ভারী বর্ষণ ও ফেনী নদীর পানিতে নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন উপজেলা পানিবন্দি হয়ে পড়েন অন্তত ২০ লাখ মানুষ। ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন লক্ষাধিক মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় চার ইঞ্চির মতো পানি নেমেছে। বর্তমানে তীব্র রোদ। পানি কমতে শুরু করায় আতঙ্ক কমে মানুষের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। আমাদের রেগুলেটর দিয়ে তীব্র গতিতে পানি নামছে।
সেনবাগ উপজেলার আবদুল কাদের বলেন, পানি স্বাভাবিকভাবে নামছে। এই মুহূর্তে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টিপাত, জোয়ার ও ফেনী থেকে আসা পানির চাপ- সবকিছু মিলিয়ে কোম্পানীগঞ্জ মোটামুটি ভালো আছে। ভাটা শুরু হয়েছে। ফেনীর দাগনভুইয়া অংশে পানির প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও সিলোনিয়া নদী দিয়ে পানি নির্গমন পর্যাপ্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সবাই এখনো পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্রসহ আশপাশের সব পানিবন্দি মানুষের খোঁজ রাখতে বিত্তবানদের আহ্বান জানাচ্ছি। বেশিরভাগ মানুষের রান্নাঘরে পানি। তাদের দিকে যেন খেয়াল রাখেন।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর আট উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন অন্তত ২০ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ। জেলার ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। অনেকে পানিবন্দি হয়ে নিজের বসতবাড়িতে আছেন। আমরা সবার মাঝে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। তবে বন্যা পরবর্তী সুপেয় পানি পাওয়া ও পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি মোকাবিলায় আমাদের লোকজন কাজ করছে।
ইকবাল হোসেন মজনু/জেডএইচ/জেআইএম