‘আমার ছোট্ট পোলাটাও বাবার লাশ নিয়া কবরস্থানে দৌড়াদৌড়ি করতাছিল’
‘আমার এই ছোট্ট পোলাটাও বাবার লাশ নিয়া পুলের কবরস্থানে দৌড়াদৌড়ি করতাছিল। কিন্তু কবরস্থানের লোকজন দাফন করতে রাজি হয় নাই। তারা কইছে গুল্লি খাওয়া মরদেহ দাফন করা যাইবো না। মানুষ কতেটা পাষাণ হইতে পারে!’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত মাছ ব্যবসায়ী মিলনের (৩০) স্ত্রী মোসা. শাহনাজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘তার ইচ্ছা আছিলো পোলাডারে পড়ালেখা করাইয়া ডাক্তার বানাইবো। পরে কষ্টমষ্ট কইড়া একটা ফার্মেসির দোকান দিয়া দিবো। তার স্বপ্ন মনে হয় আর পূরণ হইলো না। আমি এখন ঘরভাড়া, খাওয়া-দাওয়া আর পোলার লেখাপড়ার খরচ কেমনে চালামু?’
গত ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে মাছের আড়ৎ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত এখানে মাছের ব্যবসা করে আসছিলেন মিলন। বরিশালের দুমকি গ্রামের হোসেন হাওলাদারের ৬ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন তিনি। জীবিকার তাগিদে ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করছিলেন। গত ৫ বছর যাবৎ তিনি তার পরিবার নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল বাজার সংলগ্ন আবু তাহেরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার চলছিল মিলনের। বড় ছেলে দ্বীন ইসলাম (৯) সিদ্ধিরগঞ্জ রেবতী মোহন পাইলট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আর ১৮ মাসের একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান রয়েছে, তার নাম সুমাইয়া।
শাহনাজ আক্তার তার স্বামীর মৃত্যুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘গত ২১ জুলাই সকালে মাছের আড়তে মাছ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে গেছিল সে (মিলন)। এরপর দুপুরের পরে একজন আমারে আইয়া কইতাছে আমার জামাইরে নাকি গুল্লি করছে। আমি তহনই (তখন) বেহুশ হইয়া যাওয়ার অবস্থা। পরে আমি যাইতে পারি নাই। আমার এক ভাই আর কে জানি রক্তমাখা গায়ে তারে হাসপাতালে নিয়া গেছিল। কিন্তু ডাক্তাররা কইছে হেয় বাঁইচা নাই। এরপর যখন আমার জামাইর মরদেহ নিয়া বাড়ির সামনে আইছে, এই জায়গার একজন মানুষও আমাগো কারো পাশে ছিল না। সবাই তাড়াহুড়ো কইরা লাশরে পাঠানোর জন্য চিল্লাচিল্লি করতাছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমার জামাই অনেক ভালো মানুষ আছিলো। আমাগো শান্তির চিন্তা কইরা আমার বাপে ৫ বছর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে একটা মাছের দোকান নিয়া দিছিলো। তখন থেকে আমি গার্মেন্টসের চাকরি ছাইড়া দেই। কতো সুখের সংসার চলতাছিল আমাগো। কিন্তু আল্লাহ তারে নিয়া গেলো। এখন আমরা কী করমু, কার কাছে যামু?’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তার কথা শুনি নাই। তবে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো মিলনের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মিলনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। এটা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।
এফএ/এমএস