আইনজীবী সমিতি
আত্মগোপনে শামীম ওসমান অনুসারীরা, বিএনপিপন্থিদের নির্বাচন ঘোষণা
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া ছেড়েছেন আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। বিশেষ করে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোহসিন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনিসহ কার্যকরী কমিটির কারো দেখা মিলছে না। যাদের সবাই শামীম ওসমানের অনুসারী আইনজীবী।
এই অবস্থায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জরুরি তলবী সভা করে বর্তমান কার্যকরী কমিটি অগণতান্ত্রিক কমিটি হিসেবে উল্লেখ করে নতুন করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পাস করিয়ে নেন। সেই সঙ্গে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অ্যাডভোকেট মো. রফিক আহমেদকে আহ্বায়ক ও মো. শাহ আলম খানকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান বার ভবন করার পরিবর্তে পূর্বাবস্থায় তথা জেলা আইনজীবী সমিতির বার ভবন নামকরণ করা হয়।
সাধারণ আইনজীবীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারীরা নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কর্তৃত্ব বজায় রেখে আসছিলেন। শামীম ওসমানের আধিপত্যের অংশ হিসেবে গত কয়েক বছর ধরেই তার একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই নির্বাচনে প্যানেল দেওয়া হতো। তাদের বাইরে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের অনেকে প্রস্তুত থাকলেও নির্যাতন নীপিড়নের ভয়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সাহস পেতেন না।
কারণ অনেকবার শামীম ওসমানের সমর্থনের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে গিয়ে হেনেস্তার শিকার হয়েছেন। সেইসঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও নির্বাচনের বাইরে থাকতেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা নির্বাচন বর্জন কিংবা আগে থেকেই কারচুপির অভিযোগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতেন।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিগত দিনে যারা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে ছিল তারা অগণতান্ত্রিকভাবে ছিল। তাই গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আইনজীবীরা জরুরি তলবী সভা করে এডহক কমিটি গঠন করেছেন। আমরা সকল আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জ আদালতে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা করবো। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার কার্যক্রমে সহযোগিতা করবো।
আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, আমরা আইনজীবী, আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা আইনজীবী পরিবার। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে নারায়ণগঞ্জের গডফাডার শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিকে জিম্মী করে রেখেছিল। আমরা শামীম ওসমানের দালাল আইনজীবীদের আর চাই না।
তিনি আরও বলেন, ওসমান পরিবার কতকাল ধরে গণবিরোধী কাজ করেছে, তারা কত খুনের সঙ্গে জড়িত। এই ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আইনজীবীরা যুক্তির নিরিখে চলে, যেখানে যুক্তি আছে আইনজীবীরা সেখানে আছে। আমরা আইনজীবীরা ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো।
তবে বর্তমান বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এই কার্যক্রম সম্পর্কে আওয়ামী লীগপন্থী সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, আগে যারা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে ছিল তারা একচেটিয়াভাবে সব করেছিল। যার কারণে সব আইনজীবী তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও একচেটিয়াভাবে সব করতে চাচ্ছেন। তাদের কাউকেই সমর্থন করাটা ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, যদি আইনজীবী সমিতিতে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বিএনপির আইনজীবীদের উচিত দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এফএ