ফেনীর দুই উপজেলার ৭৬ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৬টি স্থান ভেঙে ৭৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) সকালে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২ আগস্ট) পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে মালিপাথর, দক্ষিণ শালধর ও পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়। গত মাসেও বাঁধের একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। দুপুরের দিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বক্স মাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর টেটেশ্বর এলাকায় একটি ও সাতকুচিয়া এলাকায় বাঁধের দুইটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর ও চাড়িগ্রাম এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বিকেলের দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। এতে কালীকৃষ্ণ নগর, পশ্চিম মির্জানগর, গদানগর, মনিপুর, ছয়ঘরিয়া ও সত্যনগর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া রাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মোট ১৬টি স্থানে ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে। এখনো পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ ও আরও ২৫০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ ও ৫ মেট্রিক টন মজুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া পরশুরামে শনিবার (৩ আগস্ট) স্থানীয় সংসদ সদস্য আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূইয়াসহ জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।
মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা আবু আব্দুল্লাহ বলেন, এতো প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত পার করছি আমরা।
মো. খলিল উল্লাহ নামে আরেকজন বলেন, এই দিকের এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিত তলিয়ে গেছে। পানি আরও বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ফজলুল বারী বলেন, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠলো। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
চিথলিয়ার শালধর এলাকার কৃষক মো. কাশেম বলেন, গতমাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। ফের নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারো একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে গেছে। এরইমধ্যে ফুলগাজীতে পানি প্রবেশ করে মাছ, মাংস ও সবজির বাজারসহ আশপাশের সড়ক ডুবে গেছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এতো পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৬টি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে নতুন করে আর ভাঙনের শঙ্কা নেই।
গতমাসেও ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীর বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/জেআইএম