ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘এভাবে গুলি খেয়ে বাচ্চাটা মারা যাবে, কোনো দিন ভাবিনি’

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৯:৪০ এএম, ০২ আগস্ট ২০২৪

১৭ বছর বয়সী কিশোর মো. আহাদুন। পড়াশোনার পাশাপাশি মুদির দোকান দেখাশোনা করত। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বৈঠাখালী এলাকায় থাকত। কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই পরিবারের সঙ্গে বাড্ডার বাসায় বসে রাতের খাবার খাচ্ছিল আহাদুন। কিছুক্ষণ পর সে বাইরে যায়। দীর্ঘ সময় বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের লোকজন। কিন্তু তার খোঁজ মেলে না। সবশেষ দুদিন পর ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার লাশের সন্ধান মেলে।

আহাদুন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে। মজিবুর প্রায় এক যুগ ধরে বাড্ডা এলাকায় স্ত্রী ও চার ছেলে নিয়ে থাকেন। সেখানে ডিজেল ইঞ্জিন মেরামতের কাজের পাশাপাশি একটি মুদি দোকান চালান। চার ছেলের মধ্যে তৃতীয় আহাদুন। পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ‘জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্ক’ বিষয়ে এবার এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। আগামী বছর তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় আহাদুনের গ্রামের বাড়ি গেলে তার চাচা আবুল হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আহাদুনের লাশ শনাক্ত করেন তার বাবা মজিবুর রহমান। লাশে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। একটি কানের এক পাশে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটি গুলি লাগে পায়ে।

আক্ষেপ করে আবুল হোসেন বলেন, আমার ভাতিজা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে তার বাবার মুদিদোকান চালাত। এভাবে গুলি খেয়ে নিরপরাধ বাচ্চাটা মারা যাবে, কোনো দিনও ভাবিনি। এই মৃত্যুর বিচার আমরা কার কাছে চাইবো বলেন? সব আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলাম।

আহাদুনের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, ‘১৯ জুলাই রাতে টিভিতে খবর দেখি, ঢাকা মেডিকেলে দুটি অজ্ঞাত লাশ আছে। পরের দিন অনেক চেষ্টার পর জরুরি বিভাগের স্টোর রুমে গিয়ে ২০-২৫টি লাশ দেখতে পাই। সেখানে আহাদুনের লাশও ছিল। বাবা হয়ে ছেলের লাশ কাঁধে নেওয়া যে কী কষ্ট, এটা বোঝাতে পারবো না ভাই। আল্লাহ এর আগে আমারে মৃত্যু দিলো না কেন!’ এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মজিবুর রহমান।

নিহত আহাদুনের ছোট চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজারে যারা গুলি করে মারল, তাদের যেন বিচার হয়। ভাতিজার লাশটা হিমঘরে রাখা হয়নি, রাখা হয়েছিল একটা সাধারণ রুমে। ফলে লাশ গলে নরম হয়ে যায়। পোস্টমর্টেমে সিরিয়াল দিতে হয়েছে, গোসল করাতে সিরিয়াল দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে লাশটা বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে খরচ হয়েছে দেড়লাখ টাকার মতো। এতটুকু একটা ছেলে, কার কি ক্ষতি করেছিল যে, তাকে দুটি গুলি করতে হয়েছে? আমরা শুধু আমাদের ভাতিজার জন্য দোয়া চাই। আর কিছু চাই না। বিচার চাইলেই বা কার কাছে চাইবো? আর কারো সঙ্গে যেন এমন ঘটনা না ঘটুক।’

কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, আহাদুন ছেলেটি নরম স্বভাবের ছিল। মাঝেমধ্যে এলাকায় আসতো। তার বাবা-চাচারা এলাকায় নিরীহ হিসেবে পরিচিত।

এইচ এম কামাল/জেডএইচ/জিকেএস