আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কিশোর আসামির জামিন
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার পুলিশলাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আলোচিত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তার আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম বুলেট সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ছিল। সে কিশোর হওয়ায় মামলা স্থানান্তর হয়েছে। এর আগে ৪ আগস্ট শুনানির দিন ছিল। কিন্তু আমরা আজ নতুন করে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আদালত শুনানি গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই ওই কিশোরকে কারাগারে পাঠান আদালত। তবে তাকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন অগোচরেই ছিল।
বুধবার (৩১ জুলাই) একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় তার বোন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
ওই কিশোর গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। সে বর্তমানে রংপুর পুলিশলাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। আমি আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’
সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’
ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ওই কিশোরকে। তাকে গ্রেফতার ও কারাগারে আটকের ঘটনা নিয়ে তার বোন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
ওই কিশোরকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।’
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘটনার দিনতো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে সে আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, আইন অনুযায়ীতো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়। যাই হোক, আজকে তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। তার জামিন হয়েছে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।’
জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম