ধারণক্ষমতার তিনগুণ বন্দি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে
মোট ১৩ একর জায়গার ওপর নির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর চালু হয়। এর মধ্যে ৮ একর জায়গা কারা অভ্যন্তরে ও ৫ একর কারাগারের বাইরে রয়েছে। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নারী-পুরুষসহ মোট বন্দির ধারণক্ষমতা ৫৭০ জন। এর মধ্যে নারীদের জন্য ৩০ ও পুরুষদের জন্য ৫৪০ জনের ধারণক্ষমতা রাখা হয়েছে ওয়ার্ডগুলোতে। কিন্তু বর্তমানে ১ হাজার ৯৩০ জন বন্দি রয়েছেন কারাগারে। এছাড়া হাসপাতাল বেড আছে ২০টি।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে প্রতিদিনই গ্রেফতার অভিযান চলছে। এরইমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫টি থানায় নতুন করে দায়ের করা ৩০টি মামলায় ৫৮৬ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই কারাবন্দির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম-অপারেশন) চাইলাউ মারমা বলেন, নারায়ণগঞ্জে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নাশকতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আকাশ। কিছুদিন আগে তিনি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কয়েক দিনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ভেতরে ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ধারণক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ বেশি কারাবন্দি রাখা হয় কারাগারে। একটা মানুষের ন্যূনতম অধিকার জেলখানায় রক্ষা হয় না।
আকাশ বলেন, কয়েকদিনের কারাভোগে আমি বুঝতে পেরেছি কারাগারে থাকাটা কত কষ্টকর। এবারই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল। আর প্রথমবারই আমি চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছি। ঠিকমতো ঘুমানো যায় না, গোসল করা যায় না। রাতে একজনের ওপর আরেকজনের ঘুমাতে হয়। সেইসঙ্গে কারাগারে যে খাবার দেওয়া হয় সেটার মানও খারাপ।
শহরের হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, কারাগারে কী পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয় সেটা আমি জেল খেটেছি, আমি বুঝি। বড় বড় কর্মকর্তারা বাইরে থেকে যত কথাই বলুক না কেন, যারা ভেতরে থাকে তাদের কষ্ট কেউ দেখে না। কারাগারে ঢোকার পর থেকেই বন্দিদের নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়। যাদের টাকা আছে, তারা ভালো থাকতে পারেন। যাদের টাকা নেই, তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। জেলখানায় কোনো মানবাধিকার নেই।
তিনি আরও বলেন, বেশি লোক থাকার কারণে বন্দিদের এককাত হয়ে ঘুমাতে হয়। বর্তমানে আরও বন্দি বেড়েছে। এই অবস্থায় জেলখানার ভেতরের অবস্থা খুবই শোচনীয় হওয়ার কথা। বন্দিদের জন্য দেওয়া সরকারি খাবার খুব কষ্ট করে খেতে হয়। আর ক্যান্টিনের খাবারের দাম কয়েকগুণ বেশি। এগুলো সাধারণ বন্দিদের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব না। বন্দিদের জন্য সরকারিভাবে দৈনন্দিন ব্যবহৃত অনেক জিনিস দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু সেগুলোও পাওয়া যায় না।
তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। যারা কারাগারে থাকেন ঠিক তারাই বলতে পারেন কারাগারের পরিবেশ কেমন। নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কোনো রকমের ভোগান্তি নেই। সকলেই বেশ ভালোভাবে ভালো পরিবেশে থাকেন।
এ বিষয়ে নারারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. মামুনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে কারাবন্দির ধারণক্ষমতা ৫৭০ জন। বর্তমানে ১ হাজার ৯৩০ জন বন্দি রয়েছেন কারাগারে। তবে এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। উপরে নিচে বিছানা করে কারাবন্দিরা বেশ ভালোভাবেই ঘুমাতে পারছেন। কোনো কারাবন্দিরই কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ধারণক্ষমতার বেশি হলেও কারাবন্দিদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারাগারে ৬তলা একটি বন্দি ব্যারাক ও ৬তলা সেল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেই কারণে বন্দিদের সেভাবে কষ্ট হচ্ছে না। বন্দিরা বেশ ভালোভাবেই থাকতে পারছেন।
কারাবন্দিদের ভোগান্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো সবসময় একপক্ষীয়ভাবে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ভোগান্তি হচ্ছে এরকম কোনো খবর আমার কাছে নেই। যদি কোথাও ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকে আমি জানলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
এফএ/জেআইএম