ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গুলির ভয়ে বাসায় ফিরতেন না, মারা গেলেন গুলিতেই

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৮:২৪ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের কাঁচপুর সেতুর কাছে ঠিকাদারের অধীনে ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ করতেন জাকির হোসেন (২৪)। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ ও সারা দেশে কারফিউ জারি হওয়ায় বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। তাই সেখানেই একটি ভবনে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলেন। গত ২১ জুলাই বিকেলে কাজ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে পাশের একটি দোকানে নাশতা খেতে যান জাকির। এসময় হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার পিঠে।

গুলি লাগার পর দৌড়ে পাশের একটি গলিতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জাকির। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। পরে সহকর্মীরা দ্রুত মরদেহ নিয়ে যান জাকিরের মায়ের কাছে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায়।

মা রাতেই মরদেহ নিয়ে রওয়ানা হন গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বাকলজোড়া গ্রামে। পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় জাকির হোসেনের মরদেহ। এমনটাই জানান মা মিছিলি বেগম।

নিহত জাকির হোসেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বাকলজোড়া গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে। ফজলু মিয়া পেশায় দিনমজুর ছিলেন। অন্যের বাড়িতে বসবাস করতেন। জাকিরের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন মারা যান তিনি।

জাকিরের মা মিছিলি বেগম বলেন, ‘ভিটেমাটি না থাকায় ছোট জাকিরকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা নতুনবাজার এলাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে রাস্তা থেকে ভাঙারি কুড়িয়ে, মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে বড় করতে থাকি। ১৫-১৬ বছর বয়স হওয়ার পর কাজ শুরু করে জাকির। এরপর আমি ভাঙারি কুড়ানো বন্ধ করে দেই। ছেলের আয়ের টাকা দিয়ে কিছুদিন আগে গ্রামে ঘর তৈরির জন্য ১৫ শতক জায়গা কিনেছি। থাকার জন্য একটা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও করছিলাম। হঠাৎ একটি গুলি আমার সব স্বপ্ন কেড়ে নিলো!’

তিনি আরও বলেন, “আন্দোলন শুরুর তিন-চারদিন আগে কাঁচপুর সেতুর কাছে ওয়াসার লাইনের কাজ করতে গিয়েছিল জাকির। ঠিকাদারের অধীনে রোজের (দিন) হিসেবে কাজ করতো। আন্দোলনের কারণে বিপদের ভয়ে বাসায় না ফিরে সেখানেই থেকে যায়। প্রতিদিন ফোনে বলতো, ‘মা আন্দোলন চলছে, গুলি চলছে, বাসায় আসলে রাস্তায় গুলি লাগতে পারে’।”

এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়ে মিছিলি বেগম বলেন, ‘একটা গুলি এসে আমার সব স্বপ্ন আশা ভেঙে দিয়েছে। আমার আর কোনো আশা নেই। আমার পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকারও আর মানে নেই। আল্লাহ যেন এর বিচার করেন।’

প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মিছিলির জীবনের গল্পটা করুণ। তিনি ছেলের জন্য জীবনটা উজাড় করে দিয়েছেন। সেই ছেলেকে বিনা দোষে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন তার আর কোনো অবলম্বন রইলো না। এত কষ্ট সহ্য করে মানুষ কীভাবে বাঁচে জানা নেই।’

নিহত জাকিরের খালাতো ভাই এন্টাস মিয়া বলেন, ‘জাকির প্রায় সময়ই কল করে আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিতো। অথচ এখন তার মৃত্যু দেখতে হলো। একটা গুলিই তাকে শেষ করে দিলো। তার কী দোষ ছিল? কে দেবে এখন তার মারে আশ্রয়!’

দুর্গাপুর থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব বলেন, ‘শুনেছি জাকির নামের একজন ছেলে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। মারা যাওয়ার পর তারা নিজেরা এনে দাফন করেছেন। ময়নাতদন্তের বিষয়টি তারা না জেনেই দাফন করেছেন। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি।’

এইচ এম কামাল/এসআর/এএসএম