ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জুনায়েদের টাকায় চলতো ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৪

‘ওরা কেন আমার বুকের ধন কেড়ে নিলো? আমার ছেলে তো কারও ক্ষতি করেনি। আমি এখন কার কাছে বিচার চাইবো? আমার জুনায়েদকে তোমরা এনে দাও।’

এভাবেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন মা ডলি বেগম। তার ছেলে জুনায়েদ (১৭) গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

জুনায়েদের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বিলদেওনিয়া এলাকায়। তার বাবার নাম শাহ আলম ফরাজি। তিনি পেশায় দিনমজুর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জুনায়েদ সবার বড়। অভাবের সংসারে ষষ্ঠ শ্রেণির পর থমকে যায় তার পড়াশোনা। বাবার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরতে ঢাকার মিরপুরে একটি কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে জুনায়েদ। প্রতিমাসে সে ৮ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতো।

জুনায়েদের কর্মস্থল আইটি গ্যালারির মালিক সবুজ আলমের বরাতে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে জুনায়েদ মিরপুর ১০-এ ‘আইটি গ্যালারি’ নামের কম্পিউটারের দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিল। সেসময় ওই এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ দেখে আবার দোকানে ফিরে যাচ্ছিল সে। ওইসময় হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটি বুলেট তার শরীর ভেদ করে বের হয়ে যায়। পরে পথচারীরা প্রথমে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন

আইটি গ্যালারির মালিক সবুজ আলম বলেন, ‘আমার দোকান এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে জুনায়েদসহ আরও চার কর্মচারীকে দ্রুত দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে আসতে বলি। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি জুনায়েদের শরীরে গুলি লেগেছে। পরে আমি দ্রুত হাসপাতালে ছুটে গেলে চিকিৎসক জানান, জুনায়েদ মারা গেছে। ও খুব ভালো ছেলে ছিল। চুপচাপ কাজ করতো। আমি ওর বাবা-মাকে কী বলে শান্তনা দেবো!’

জুনায়েদের বাবা শাহ আলম ফরাজি বলেন, ‘আমার আয়ে সংসার চলে না। তাই বড় ছেলে জুনায়েদ অল্প বয়সেই ঢাকায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ নেয়। প্রতিমাসে ও টাকা পাঠাতো। তাই দিয়ে ওর ভাই-বোন পড়াশোনা করতো। আমার ছেলেটা গুলিতে মারা গেলো, এর দায় কে নেবে? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর বলেন, ‘জুনায়েদ সম্পর্কে আমার ভাইয়ের ছেলে। খুব অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেছিল ছেলেটি। ওর এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব পরিবারটির পাশে থাকবো।’

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/এমএস