ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘মইরা যাইবো জানলে ওইদিন বাইর হইতে দিতাম না’

জেলা প্রতিনিধি | শেরপুর | প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৪

 

এগারো মাস আগের কথা। পারিবারিকভাবে বিয়ের পর সংসার শুরু করেন আসাদুল্লাহ (২৫) ও মোছা. নুরানি খাতুন (২০)। অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয় তাদের। নতুন বউকে নিয়ে আসাদ ভাড়া বাসায় ওঠেন। উত্তরার দক্ষিণখান মাজার রোডে শুরু হয় নতুন দম্পতির স্বপ্নযাত্রা। স্বল্প শিক্ষিত আসাদ শুরু করেন ভাড়ায় লেগুনা চালানো।

সময়ের সঙ্গে নতুন অতিথি আসার অপেক্ষা শুরু হয় তাদের। নুরানী এখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নতুন অতিথির অপেক্ষায় থাকা আসাদের স্বপ্ন এখানেই থেমে যাবে, ভাবেনি কেউই। গেলো ১৮ জুলাইয়ের সহিংসতায় আঁধার নেমেছে তাদের সংসারে। অন্তঃসত্ত্বা নুরানীর চোখে মুখে এখন রাজ্যের অন্ধকার।

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের পশ্চিম চাউলিয়া গ্রামের জয়নুদ্দীনের ছেলে আসাদ। উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজারে সহিংসতা চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

প্রতিদিনের মতো নিয়ম করে আসাদ সেদিনও বেরিয়েছিলেন কাজে। ১৮ জুলাই দুপুরের খাবারের পর লেগুনা নিয়ে বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর তার নিথর দেহ ফেরে গ্রামের বাড়িতে।

অন্তঃসত্ত্বা নুরানীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ এখন মলিন। স্বামী হারানোর কষ্ট আর সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায় নির্বাক তিনি।

নিহত আসাদুল্লাহর স্ত্রী নুরানি খাতুন বলেন, ‘আমার জামাই ড্রাইভার, লেগুনা চালাইতো। এই আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানে না। প্রত্যেক দিন বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বাইর হত, সারাদিন গাড়ি চালাইয়া বাসায় আসতো। কারো সঙ্গেই তেমন মিশতো না। হঠাৎ করেই আমার জামাই মইরা যাইবো জানলে আমি ওইদিন বাইর হইতে দিতাম না। আমার আট মাসের বাচ্চা পেটে, কই দিন পরই বাচ্চা হইবো। এহন ওই (আসাদুল্লাহ) মইরা গেলো। আমার সন্তানকে কে দেখবো। আমার জামাই কোনো পক্ষের ছিল না, ওই গাড়ি চালাইতো। কিছু দিন পর আমার বাচ্চা হইবো, ওর বাপ দুনিয়ায় নাই, কারে বাপ ডাকবো? আমি কেমনে মানুষ করমু ওরে?’

আসাদুল্লাহর বাবা জয়নুদ্দীন বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকার উত্তরায় থেকে লেগুনা চালাইতো। হঠাৎ করে রাস্তায় উঠছে আর ওরে গুলি করছে। দুইটা গুলি দুই হাতে আর একটা পেটের সামনে দিয়ে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। আরেকটা নাভির নিচে।’

‘মইরা যাইবো জানলে ওইদিন বাইর হইতে দিতাম না’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার পোলা কোনো পক্ষ আছিল না। আমাদের নিজের কোনো বাড়ি নাই, তাই পুলাডা ঢাকায় থাকতো। পোলার বউয়ের আট মাসের বাচ্চা পেটে, কইদিন পর বাচ্চা হবে। আর এহন আমার পোলা নাই। আমার একটাই পোলা আছিলো। চার সদস্যের পরিবার ছিল আমাদের, কিন্তু এখন পোলাডাই নাই।’

স্থানীয় সুরুজ আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে ফোন আসে আসাদুল্লাহ গুলি খেয়ে মারা গেছে। আমরা বিশ্বাস করতে পারি নাই। ওই আমাদের এলাকার ভাইস্তা (ভাতিজা)। বিয়ের পর থেকে ঢাকায় লেগুনা চালাইতো। লেখাপড়া কোনোমতে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছে, আন্দোলন কী জানে না। পেটের ভাত জোগাড়ে গাড়ি চালাইতো। বছরখানেক আগে গ্রামে বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢাকা গিয়েছিল, এখন লাশ হয়ে আইলো। ওর বউ আট মাসের গর্ভবতী, বাচ্চার মুখটাও দেইখা যেতে পারলো না।’

গড়জরিপা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আসাদুল্লাহ লেগুনা চালাতো ঢাকায়। আন্দোলন চলাকালে গুলিতে মারা গেছে। খবর পেয়ে ওর জানাজায় গিয়েছি, পরে এলাকার লোকজনসহ তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার গর্ভবতী কার্ডসহ যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দেওয়া যায় আমি দেবো। তাদের যেকোনো সহযোগিতায় পাশে আছি।

শ্রীবরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকী বলেন, গত ১৯ জুলাই আমরা ঢাকা থেকে গড়জরিপা ইউনিয়নের চাউলিয়া গ্রামে দুইটি মরদেহ আসার সংবাদ পাই। পরে টিম পাঠিয়ে তাদের তথ্য নিয়েছি।

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/জেআইএম