ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুরিয়ারেই পচে নষ্ট হলো ৭২৫ মণ আম

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ০৮:০৯ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৪

স্বাদ ও মানে অনন্য হওয়ায় সারাদেশেই খ্যাতি অর্জন করেছে নওগাঁর আম। বাজার ছাড়াও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এসব আম। ক্রেতাদের দোরগোড়ায় আম পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিস। তবে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপ্লিট শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে নওগাঁর আমে। সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছানোর কারণে ৭২৫ মণ আম পচে নষ্ট হয়েছে কুরিয়ারে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪-১৫ লাখ টাকা।

নওগাঁর সাপাহারে অবস্থিত কুরিয়ার এবং পার্সেল সার্ভিসগুলোর ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৭ ও ১৮ জুলাইয়ের বুকিংকৃত বেশিরভাগ আম রাস্তায় নষ্ট হয়েছে। এর পরিমাণ অন্তত ১৪৫০ ক্যারেট (প্রতি ক্যারেট ২০ কেজি)।

বুধবার (১৭ জুলাই) প্রতিমণ আম্রপালি আম বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। বারি-৪ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া ফজলি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ এবং ব্যানানা ম্যাংগো ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৪৫০ ক্যারেট (৭২৫ মণ) আমের সর্বনিম্ন মূল্য দুই হাজার টাকা ধরে হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪-১৫ লাখ টাকা। 

কোন কুরিয়ারে কত কেজি আম নষ্ট

স্টেডফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেডের সাপাহার হাবের ম্যানেজার হাসান চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৭ জুলাই প্রায় ৮০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম বুকিং হয়েছিল আমাদের হাবে। দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্য রওনাও দিয়েছিল তিনটি গাড়ি। কিন্তু কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গাড়িগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এতে ৮০০ প্যাকেট আম সবগুলোই রাস্তায় পচে নষ্ট হয়েছে। যেগুলোর আনুমানিক ওজন ছিল ১০ হাজার কেজির বেশি। সর্বনিম্ন দাম ধরলেও প্রায় ৯ লাখ টাকার আম নষ্ট হয়েছে।’

কুরিয়ারেই পচে নষ্ট হলো ৭২৫ মণ আম

এ জে আর পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিসের সাপাহার শাখার এজেন্ট মুমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় সবশেষ বুকিং নিয়েছিলাম বুধবার (১৭ জুলাই)। ওইদিন ৪০০-৫০০ প্যাকেট আম বুকিং হয়েছিল। এরমধ্যে ১০০ প্যাকেট আম গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩০০ প্যাকেট আম নষ্ট হয়েছে। যার আনুমানিক ওজন প্রায় চার হাজার কেজি। যার সর্বনিম্ন বাজারমূল্য ৪ লাখ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পণ্য নষ্ট হলে এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না। আমাদের কোনো গাফিলতির কারণে নষ্ট হলে তার দায়ভার আমরা অবশ্যই নিতাম।’

একই অবস্থা করতোয়া কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসেও। জানতে চাইলে শাখা ইনচার্জ আশরাফুল আলম বকুল বলেন, ‘আমরা সবশেষ ১৩০ প্যাকেট আম বুকিং নিয়েছিলাম। কিন্তু শাটডাউনের কারণে সব আম পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। উপজেলা পর্যায়ের ঠিকানাগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে। শাটডাউনের কারণে সেগুলোতে গাড়ি যেতে পারেনি। কিছু আম ঢাকায় সঠিক সময়ে পৌঁছার পরও গ্রাহকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে পারেননি। যে কারণে অফিসেই অনেক আম নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি আম নষ্ট হয়েছে।’

আহমদ শাহ পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিস এবং সওদাগর কুরিয়ার সার্ভিসে ১০-১২ ক্যারেট আম নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।

ক্ষতিপূরণ বিষয়ে যা বলছে কুরিয়ার সার্ভিস

সার্ভিস গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেডফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেডের সাপাহার হাবের ম্যানেজার হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কখনোই কাউকে বলিনি যে, কাঁচাপণ্য নষ্ট হলে এর দায়ভার কোম্পানি নেবে। আমাদের কাছে যখন গ্রাহক আইডি খোলা হয় তখন শর্তের মধ্যে উল্লেখ থাকে যে, কাঁচাপণ্যের দায়ভার কোম্পানি নেবে না। সরকার অথবা কোম্পানি থেকে কোনো সহযোগিতা করা হলে আমরা সেটা গ্রাহককে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে আমরা আর কোনো আম বুকিং নিচ্ছি না।’

কুরিয়ারেই পচে নষ্ট হলো ৭২৫ মণ আম

করতোয়া কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসের শাখা ইনচার্জ আশরাফুল আলম বকুল বলেন, রাজশাহী, রংপুর হেড অফিস এবং আমাদের শাখার মধ্যে সমন্বয় করে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ব্যতিক্রম দুই কুরিয়ার সার্ভিস

সুন্দরবন

সুন্দরবন কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসের সাপাহার শাখা ইনচার্জ নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই আমাদের এখানে ২০০ প্যাকেট আম বুকিং হয়। পরে অফিস থেকে নির্দেশনা আসায় আম গ্রাহককে ফিরিয়ে দিয়েছি। যে কারণে আমাদের কাছে কোনো আম নষ্ট হয়নি।’

ইউএসবি

কুরিয়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শামসুল ইসলাম বলেন, বুধবার (১৭ জুলাই) ২৭৫ ক্যারেট আম বুকিং নেওয়া হয়েছিল। আমে কোনো সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

তবে এ পরিবহনে আম পাঠানো উদ্যোক্তা নাসরুল্লা নাইম জানান, তিনি ইউএসবি কুরিয়ারে ২০ কেজি আম চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিলেন। গ্রাহক সে আম এখনো পাননি।

দায় নিচ্ছেন উদ্যোক্তরা

কুরিয়ার এবং পার্সেল সার্ভিসে বেশিরভাগ আম পাঠান তরুণ উদ্যোক্তারা। তাদের কাছে সারাদেশ থেকেই অনলাইনে আমের অর্ডার আসে। শাটডাউন কর্মসূচির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারাও।

ওমর ফারুক নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৭ জুলাই এ জে আর কুরিয়ারে ৪০০ কেজি আম (২০ ক্যারেট) আম বুকিং করেছিলাম। কিন্তু সব আম রাস্তাতেই নষ্ট হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গ্রাহককে আবার আম পাঠানো লাগবে।’

আরেক উদ্যোক্তা সেলিম হোসেন বলেন, ‘স্টেডফাস্ট কুরিয়ারে ৭০০ কেজি আম (৩৫ ক্যারেট) দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য বুকিং করেছিলাম। তবে শাটডাউনে সব আম নষ্ট হয়েছে। যার সর্বনিম্ন বাজারমূল্য ৮০ হাজার টাকা।’

এসআর/এমএস