ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জীবিত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে জমি বিক্রি করে দিলেন বাবা

জেলা প্রতিনিধি | মানিকগঞ্জ | প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪

জীবিত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে গোপনে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যুসনদ নিয়ে এই কাজ করেছেন তিনি। এখন নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী সুবন বেপারী (৩০)।

ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সিরাজপুর গ্রামে।

ভুক্তভোগী সুবন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক কন্যা সন্তান রেখে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন উপজেলার চান্দহুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা বেগমের ঘরে জন্ম নেন সুবন বেপারীসহ দুই ছেলে। সেসময় সিরাজ উদ্দিন শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন।

১৯৯৯ সালে শ্বশুরের সহযোগিতায় স্থানীয় চর কালিগঙ্গা মৌজায় ৫৪ শতাংশ কৃষি জমি কেনেন। সেই জমি অর্ধেক সিরাজ ও অর্ধেক সুবন বেপারীর নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। তখন সুবনের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। শ্বশুরবাড়ি থেকেই বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে যান সিরাজ উদ্দিন। পারিবারিক কলহের কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে সিরাজের। দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থেকে যান স্ত্রী নাজমা।

সম্প্রতি সুবন ওরফে নাহিদকে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ নেন সিরাজ উদ্দিন। এরপর সুবনের ২৭ শতাংশসহ পুরো ৫৪ শতাংশ জমিই বিক্রি করে দেন তিনি। ওয়ারিশ সনদে ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন বাদলের স্বাক্ষর রয়েছে।

জীবিত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে জমি বিক্রি করে দিলেন বাবা

সুবনের মা নাজমা বেগম জানান, সিরাজ উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীর একটি মাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে। এখন দাবি করা হচ্ছে সেই ঘরে একটি ছেলে ছিল, যার নাম সুবন। ছোট বেলাতেই সে মারা গেছে। এ কারণে তার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বাবা। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সুবন তার (দ্বিতীয় স্ত্রীর) ছেলের নাম। অথচ জীবিত ছেলেকে মৃত দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন সিরাজ। এজন্য সুবনের বাবাসহ এই চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত সবার বিচার চান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আওয়াল ও মো. আলম জানান, এরআগেও কয়েক দফা জমি বিক্রির পায়তারা করেন সিরাজ উদ্দিন। কিন্তু সেসময় সফল হননি। তাই জীবিত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে এই জালিয়াতি করেছে চক্রটি। আর মেম্বারের কথায় চেয়ারম্যান কীভাবে যাচাইবাছাই ছাড়াই একটা জীবিত মানুষকে মৃত দেখালো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

চান্দহুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন বাদল জানান, কেউ যদি তথ্য গোপন করে ওয়ারিশ সনদ নেয় এটা তার ব্যাপার। আমি সবসময় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের দিয়ে তদন্ত করিয়ে তারপর সার্টিফিকেট দিই। তারপরও যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে সংশোধনের সুযোগ আছে।

জীবিত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে জমি বিক্রি করে দিলেন বাবা

ভুক্তভোগী সুবন বেপারী পেশায় একজন সিএনজি চালক। জমির নামজারি বাতিলের জন্য তিনি উপজেলা ভূমি অফিস বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

সুবন বেপারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কী দেখে মৃত্যুসনদ দিলো? আমিতো এখনো জীবিত। তাহলে কোনো যাচাই বাছাই হলো না কেন? আমি সবার শাস্তি চাই।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু জানান, জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর করা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। ইউনিয়ন পরিষদ যদি জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে সনদ দেয় তাহলে অবশ্যই এটা অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সুবনের বাবা বর্তমানে সৌদি আরবে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, দ্বিতীয় স্ত্রীর করা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস