ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভয়ঙ্কর রূপে পদ্মা

‘বাঁধ থাকলে বাপ-দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারাতে হতো না’

আরাফাত রায়হান সাকিব | মুন্সিগঞ্জ | প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪

আষাঢ়ের বৃষ্টি আর উজানে ঢলে খরস্রোতা পদ্মা যেন আবির্ভূত হয়েছে ভয়াল রূপে। তীব্রস্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার শতবর্ষী দিঘীরপাড় বাজারে। গত কয়েকদিনের ভাঙনে এরইমধ্যে নদীগর্ভে সার, পাটের আড়তসহ এক ডজনের বেশি দোকান বিলীনের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। হুমকিতে পড়েছে শতশত প্রতিষ্ঠান। নদীতীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প থাকলেও যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় এমন বিপত্তির অভিযোগ স্থানীয়দের।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের দক্ষিণ ভাগের কামারপট্টির বড় একটি অংশ বিলীন হয়েছে নদীতে। সেখানে ৬টি কামারের দোকান ছিল বলে জানান দোকানীরা। এছাড়া নজির হাওলাদার নামের এক দোকানীর সারের দোকান ও আলমাস বেপারীর পাটের দোকান পুরোপুরি ভেঙেছে নদীর গ্রাসে। আশিংকসহ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫ থেকে ৬টি ছোটবড় দোকান। নদীতে তীব্র স্রোতে একটু একটু করে ক্ষয় হচ্ছে, ভাঙছে ভিটে। ক্ষতি এড়াতে কয়েকটি দোকানের সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিঘীরপাড় বাজারসহ টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলায় নদীর ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার জুড়ে তীররক্ষা বাঁধের প্রকল্পের কাজ চলছে। যার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪৪৬ কোটি টাকা। তবে যথারীতি কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি বর্ষায় আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে দিঘীরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায়। গত বেশ কয়েকদিন ধরে ভাঙন চললেও বেশি ভাঙন দেখা দেয় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল থেকে। ভিটেমাটি আর রুটি-রুজি সংকটে পড়ার দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে অনেকের।

‘বাঁধ থাকলে বাপ-দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারাতে হতো না’

বাজারের দোকানী উজ্জল মন্ডল বলেন, এখানে সারি সারি কামারের দোকান ছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো আর নেই। এখন এসব দোকানদাররা কী করে খাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমার দোকানও নদীর তীরে, কখন ভেঙে যায় তার কোনো গ্যারান্টি নেই। রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।

বিল্লাল হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই শুনতাছি বাঁধ দিবো দিবো। দিতাছেতো না। আজকে বাঁধ থাকলে বাপ, দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মানুষকে হারাতে হতো না।

আক্কাস নামের আরেক যুবক বলেন, একটু ভাঙলে আইসা জিও ব্যাগ ফেলে চলে যায়, তারপর আর খোঁজ খবর থাকে না। আর জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারুক, এটা আমরা কেউ চাই না। এবার স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই। নয়তো ধীরে ধীরে সব দোকানই ভাঙতে থাকবে।

জানা যায়, প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন দিঘীরপাড় বাজারে ছোটবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজারের বেশি।

বাজার কমিটির সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাসমান পাটের হাট, পাইকারী মাছ, মরিচসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের আড়ৎসহ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসার কেন্দ্রস্থল দিঘীরপার বাজার। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় বাজারটি থেকে। তাই জেলার অর্থনীতিতেও গুরুত্ব রয়েছে দিঘীরপাড় বাজারের।

‘বাঁধ থাকলে বাপ-দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারাতে হতো না’

কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ভাঙার কারণে পরিসর পাল্টেছে। এতে বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

বাজারের ইজারাদার পক্ষের আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, নানা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল এই দিঘীরপাড় বাজার। মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরের বহু ব্যবসা এই বাজারকে ঘিরে। এখানে হাজারের বেশি ছোটবড় প্রতিষ্ঠান আছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় এখন সবাই চিন্তিত। যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে যায় তাহলে বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকানীদের কী হবে। সবার রুটি-রুজিতে সংকটে পড়বে, আমরা চাই দ্রুত এই বাজারের নদীতীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, নদীর এই চ্যানেলে এ বছর উজান থেকে অস্বাভাবিক স্রোতে ঢল দেখা দিয়েছে। তাই নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে দিঘীরপাড় এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, স্থায়ী বাঁধের কাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। লৌহজংয়ে এরইমধ্যে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁধ নির্মাণ ব্লক স্থাপন করা সম্ভব নয়, তাই আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে সেই কাজ করা হবে। এতে নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বিলম্ব হতে পারে। প্রকল্পে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন ঠিকাদার। তবে আমরা এখন যেসব স্থানে নদীভাঙন দেখা দিচ্ছে দ্রুত সেখানে প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এফএ/এমএস