ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নদীভাঙন

মানিকগঞ্জে যমুনাপাড়ের মানুষের হাহাকার

জেলা প্রতিনিধি | মানিকগঞ্জ | প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৪

‘আমার কেউই নাই দুনিয়ায়। ব্যাটা নাই, পুত্র নাই। নাই বলতে কিছুই নাই। বাড়ি ঘর ভাইঙা গেছে। খুব কষ্টে আছি। আমি এখন কই যামু।’আঁচল দিয়ে চোঁখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সত্তরোর্ধ্ব ফুলমতি বেগম।

jagonews24

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পারুরিয়া গ্রামের এই বৃদ্ধা স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এমনইতেই অসহায় জীবন যাপন করছিলেন। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শেষ সম্বলটুকুও বিলীন হয়েছে যমুনায়। এখন কি করবেন, কোথায় যাবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা ভর করেছে। তার মতো একই অবস্থা নদী পাড়ের বহু মানুষের।

যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র হয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনের ভাঙনে দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট নদীতে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। ভাঙনরোধে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

নদীভাঙন, মানিকগঞ্জে যমুনাপাড়ের মানুষের হাহাকার

সরেজমিন বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পারুরিয়া নতুন বাজার ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীপাড়ের মানুষের হাহাকারের চিত্র। কেউ ঘর ভাঙছে, কেউ ভাঙা ঘর নৌকায় তুলে যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। অনেকেই আবার গাছপালা কেটে সরাচ্ছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত ভাঙন থেকে শেষ সম্বলটুকু রক্ষায়। কেননা একটু পরপরই ভাঙছে নদীর পাড়।

ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানান, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি। যখন ভাঙন শুরু হয়, তখন মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। জিনিসপত্র সরানোর মতো সময় পাওয়া যায় না।

নদীভাঙন, মানিকগঞ্জে যমুনাপাড়ের মানুষের হাহাকার

তারা অভিযোগ করেন, নদী ভাঙন নিঃস্ব করে দিলেও সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ নির্বাচন আসলেই সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় নদী শাসন করে দেওয়ার। নির্বাচন শেষে আর কেউ খোঁজ রাখে না।

বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, নদী ভাঙনে পুরো বাঘুটিয়া ইউনিয়নই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একসপ্তাহে অন্তত্ব শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হুমকির মুখে আছে বিদ্যালয়, মাদরাসাসহ বহু স্থাপনা। ভাঙন রোধে যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বাঘুটিয়া ইউপির মানুষকে রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

নদীভাঙন, মানিকগঞ্জে যমুনাপাড়ের মানুষের হাহাকার

ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম জানান, বোর্ডের অনুমতি ছাড়া চরাঞ্চলে ভাঙনরোধে কাজ করার সুযোগ নেই। ঘটনাস্থলের ছবিসহ বিস্তারিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাদের অনুমতি পেলে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি জাতীয় সংসদেও তুলে ধরেছেন। যমুনার ভাঙন প্রবণ ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহিৃত করা হয়েছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে কাজ চলবে। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তাও সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বি.এম খোরশেদ/এএইচ/জেআইএম