নরসিংদী
রেললাইনে ৬ জনের মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য, পরিচয় মিলেছে একজনের
নরসিংদীর রায়পুরায় পৃথক ট্রেনে কাটা পড়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। একসঙ্গে এতজনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
সোমবার (৮ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজন ও দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কাললী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়। রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকার দুই কিলোমিটার অদূরে পলাশতলী ইউনিয়নের খাকচর কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে রেলপুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করেন। পরিচয় শনাক্তে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পিবিআই। নিহত সবাই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫-২৫ বছর বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেললাইনের পাশে ছিন্নভিন্ন পাঁচটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে রেল পুলিশ, পিবিআই, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। ট্রেনে কাটা পড়ে তার মরদেহ একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম পরিমল সূত্রধর (৬০)। তিনি শিবপুরের যোশর এলাকার সুরেন্দ্র সুত্রধরের ছেলে।
আরও পড়ুন:
নিহতের ছেলে বিপুল সুত্রধর জানান, রোগী দেখার জন্য সকালে রায়পুরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন তার বাবা। সেখান থেকে কীভাবে তিনি মেতিকান্দা স্টেশন এলাকায় এসেছেন তা তিনি জানেন না।
তবে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও রেলওয়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নিহত পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটির ছাদে কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তারাই নিহত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
একটি সূত্র জানায়, নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে প্রায়ই সংঘর্ষ বাধে। এসব সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র টেঁটা ব্যবহার করা হয়। সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সুমন মিয়া নামের এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করেন প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও তার সমর্থকরা। এ নিয়ে পুরো রায়পুরায় অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে সুমন হত্যা মামলা অন্যতম অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হোসেন রুবেল জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। এলাকার আধিপত্য ফিরে পেতে ওইসময় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালান রুবেল ও তার সমর্থকরা। ওইসময় এলাকায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ নিহতদের মরদেহ রেললাইনে ফেলে গেছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এছাড়া ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সকালে রেললাইনের পাশে লোকজনের ভিড় দেখে এগিয়ে আসি। এসে দেখি রেললাইনে মানুষের শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ ও রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু সামনে এগোতেই একটি মরদেহ দেখা যায়। পরে আরও সামনে গেলে চারটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘এটি পারাপারের জন্য কোনো রাস্তা নয়। তাই একসঙ্গে এতজনের মৃত্যু রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে শুনে দেখতে এসেছি। তবে যে জায়গাটিতে মারা গেছে সেটি চলাচলের রাস্তা নয়। এমনকি তারা এলাকার লোকও না। তারা কীভাবে এখানে এসেছেন একমাত্র আল্লাহই জানে।’
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরীরগুলো একত্র করেছি। এরপরই পরিচয় শনাক্তের জন্য নরসিংদীর পিবিআই সদস্যদের খবর জানিয়েছি। বেলা সাড়ে ১১টায় তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন।’
মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার আশরাফ আলী বলেন, তারা (নিহতরা) ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে। মরদেহ উদ্ধারের আগে ওই রেললাইন দিয়ে আরও তিনটি ট্রেন চলাচল করেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। এসময় তিনি বলেন, নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে পিবিআই। তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। কীভাবে এই পাঁচজন ট্রেনে কাটা পড়লেন বা মারা গেছেন তার এর কারণ অনুসন্ধানের কাজ চলছে। নিহতদের ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করতে পারলে রেলওয়ে বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান পুলিশের এই কর্মকতা।
সঞ্জিত সাহা/এসআর/এএসএম