বাঁশের নান্দনিক পণ্যে সাড়া ফেলেছে ‘স্বপ্নচূড়া’
প্রান্তিক জনপদে আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হস্ত ও কারুপণ্য। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব হস্ত ও কারুপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বাঁশের তৈরি নান্দনিক পণ্যের শৈল্পিক নির্মাণ আমাদের আদি ঐতিহ্য। সময় ও যুগের পালাবদলে নিত্যনতুন প্রযুক্তি এলেও এখনো মানুষের প্রয়োজনের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি বাঁশের তৈরি হস্ত ও কারুপণ্য। কখনো প্রয়োজন, কখনো শৈল্পিকসামগ্রী- দুই-ই মেটাতে সক্ষম বাঁশজাত পণ্য।
বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারে প্রায় ৫০ ধরনের নান্দনিক পণ্য তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার তরুণ উদ্যোক্তা মো. মহিদুল ইসলাম। তিনি গড়ে তুলেছেন বাঁশশিল্প কর্নার। যার নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নচূড়া’।
শৌখিন ব্যক্তিদের কাছে মহিদুলের এসব হস্তশিল্পের কদর দিন দিন বাড়ছে। শহর কিংবা গ্রামের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল, রিসোর্টেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তাছাড়া বাজারে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য এসব পণ্য বিক্রি হয় চড়া দামে। অনেক উদ্যোক্তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন হস্তশিল্পে মহিদুলের নন্দিত উদ্যোগ ‘স্বপ্নচূড়া’ । বাঁশের নান্দনিক হস্ত ও কারুপণ্যের শৈল্পিক নির্মাণে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন মহিদুল ইসলাম।
বাঁশের তৈরি নান্দনিক পণ্যে বঙ্গবন্ধু-ছবি জাগো নিউজ
আরও পড়ুন
জেলা শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামধন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির আঙিনায় একটি টিনশেডের ঘর। এই ঘরেই গড়ে তুলেছেন মহিদুল ‘স্বপ্নচূড়া’ বাঁশ শিল্প কর্নার নামে একটি হস্তশিল্পের কারখানা। জ্যেষ্ঠের তপ্ত দুপুরে কারখানায় কাজে ব্যস্ত তিনি। এতে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী ফারজানা ববি রজনী ও একমাত্র ছেলে ফারহান মুহিব নিহাল। এখানে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই তিনি নিজ হাতে তৈরি করছেন বাঁশের ঝাড় লণ্ঠন, ওয়ালল্যাম্প, দশ প্রকারের শোপিস, বিভিন্ন ধরনের ফুলদানিসহ অর্ধশতাধিক নান্দনিক পণ্য। এ সময় স্থানীয় কিছু দর্শনার্থীরও দেখা মেলে, তারা এসেছেন মহিদুলের ‘স্বপ্নচূড়া’বাঁশ শিল্প কর্নারের কর্মযজ্ঞ দেখতে।
কাজে ব্যস্ত ‘স্বপ্নচূড়া’র কর্ণধার মহিদুল ইসলাম-ছবি জাগো নিউজ
আরও পড়ুন:
কারখানার পাশেই একটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে ‘স্বপ্নচূড়া’র শোরুম হিসেবে। সেখানে ঢুকতেই দেখা গেলো বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও শৈল্পিকসামগ্রী। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের ঝুড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, চুলের খোঁপা, ল্যাম্পসেট, চায়ের কাপ, কেতলি, মগ, পানির বোতল, গ্লাস, জগ, কাঁটাচামচ, ট্রে, মোবাইল স্ট্যান্ডসহ অনেক কিছু।
বাঁশশিল্প কারিগর মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, এক সময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল, চাহিদাও ছিল প্রচুর। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাঁশের তৈরি নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে শৈল্পিক নির্মাণে নান্দনিক ও শৌখিন পণ্য তৈরিতে তার এই মনসংযোগ। সম্ভাবনা থাকলেও হস্ত ও কারুশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ পুঁজির অভাব। এছাড়া বিপণনে সীমাবদ্ধতা, কাঁচামাল প্রাপ্তির সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির মতো আরও কিছু বিষয় এ খাতের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে আছে।
মহিদুলের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি পণ্য-ছবি জাগো নিউজ
তিনি আরও বলেন, বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব হস্ত ও কারুপণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র ডেকোরেশন, রেস্টুরেন্ট, অফিস, রিসোর্ট, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় নান্দনিক ডেকোরেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ঘর সাজাতেও এসব পণ্যের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এগুলো তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ কেটে প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক উপকরণ দিতে হয়। তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে তা রোদে শুকানো হয়। পরে এসব বাঁশ আকারভেদে কেটে প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হয়। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করছেন তিনি। এছাড়া ‘স্বপ্নচূড়া’ বাঁশ শিল্প কর্নার নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে তার। অনলাইনে এই পেজের সহায়তায় অর্ডার নিয়েও পণ্য বিক্রি করছেন। প্রকারভেদে এসব পণ্য ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি মাসে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
সাড়া ফেলেছে ‘স্বপ্নচূড়া’-ছবি জাগো নিউজ
সাংবাদিক ও কবি রজতকান্তি বর্মণ বলেন, দেশি হস্তশিল্পের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মানসম্মত পণ্যের সংখ্যা কম। পুঁজি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে এ খাতের উদ্যোক্তারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। তাই বাজার বাড়াতে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি সরকারেরও উচিত উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা।
এ এইচ শামীম/এএনএইচএস/এসএইচএস/এএসএম