মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ইলিশের জন্য হাহাকার
ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে প্রতিদিনই চরম হতাশা নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। আর নদীতে আশানুরূপ ইলিশের দেখা না পেয়ে ধার-দেনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত তারা।
জেলেরা বলছেন, বুকভরা স্বপ্ন ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের আশায় প্রতিদিন নদীতে গিয়ে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার মেঘনা নদী তীরের বিভিন্ন এলাকার জেলে পল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জেলেরা নৌকা, ট্রলার নিয়ে নদীতে নেমে জাল ফেলছেন কিন্তু তাদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে চরম হতাশা নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পেয়ে অনেক জেলেই নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
- আরও পড়ুন-
চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ
সদর উপজেলার নাছির মাঝি এলাকার জেলে মো. সবুজ মাঝি, হানিফ মাঝি ও হাবিবুল মাঝি জানান, নদীতে ৫-৬ জন করে দল বেঁধে ইলিশ শিকারের জন্য যাচ্ছেন। কিন্তু সারাদিন নদীতে জাল ফেলেও মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ। নদীতে গিয়ে কেউ বিভিন্ন সাইজের ৪-৬টা, কেউ ১০-১২টা আবার কেউ ২-৩টা ইলিশ পাচ্ছেন। সেগুলো ঘাটে বিক্রি করে যে টাকা পান তা তেলের দোকানে দিয়ে দেখা যায় কারো ১ হাজার টাকা থাকে আবার কারো থাকে ৫-৭শ টাকা। ওই টাকা জেলেদের মাঝে ভাগ করে দেখা যায় জনপ্রতি ১-২শ সর্বচ্চো ৩শ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এতে করে সংসার চালানোসহ এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে খুবই চিন্তিত তারা।
তুলাতুলি এলাকার জেলে মো. সাইফুল মাঝি ও রাকিব মাঝি জানান, নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও তারা আশায় আশায় যাচ্ছেন।
তারা জানান, ইলিশ ধরা না পড়ায় লোকসানের কারণে অনেক জেলে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ এনজিওর কিস্তি পরিশোধের চাপে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সব মিলে বর্তমানে জেলেপল্লীগুলোতে হাহাকার চলছে।
তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন ও মো. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল ও খুলনার পাইকারী মোকামের আড়ৎদার থেকে দাদন এনে জেলেদের দিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা ইলিশ পাবে সেই মাছ আমরা মোকামের আড়তদারকে পাঠাবো, কিন্তু বর্তমানে নদীতে ইলিশা ধরা না পরায় বিপাকে রয়েছেন তারা।
তারা আরও জানান, ভরা মৌসুমে যদি এমন অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকে তাহলে মোকামের মহাজনদের চাপে তাদেরও আড়ৎ বন্ধ করে পালিয়ে যেতে হবে।
ভোলা জেলে মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বর্তমানে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবেন জেলেরা। আর এতে করে জেলেদের সমস্যাও দ্রুত সমাধান হবে।
ভোলার সাত উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় আড়াই লাখ জেলে। এদের মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার।
এফএ/জেআইএম