রাসেলস ভাইপারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারলেন গ্রামবাসী
ঘাস কাটতে গিয়ে প্রায় চার ফুট লম্বা এক রাসেলস ভাইপার মেরে আধামারা করেন এক কৃষক। পরে স্থানীয় লোকজন সাপটির গলাই প্লাস্টিকের রশি পেঁচিয়ে গাছে ঝুলিয়ে প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখেন। এতে সাপটির মৃত্যু হয়।
এরপর সাপটির পেটে বাচ্চা আছে কি না তা পরীক্ষা করতে এর পেট ব্লেড দিয়ে চিরে ফেলেন এক পশু পল্লী চিকিৎসক। অতঃপর সাপটিকে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর বটতলা এলাকায় মঙ্গলবার (২ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করলে ঘটনাটি ভাইরাল হয়।
তবে বিষয়টি অমানবিক ও আইনবিরোধী বলে দাবি করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পরিবেশবিদরা। আর গ্রাসবাসী বলছেন, সাপটি ভয়ংকর ও বিষধর হওয়ায় লোকজনের মাঝে পরিচিত করতে এবং সকলকে সচেতন করতে গাছে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে।
উপজেলা বনবিভাগ কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, এভাবে একটি জীবকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে পেট চেরাই করা আইনবিরোধী ও নেক্কারজনক। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি।
বিকেলে সরেজমিনে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে কল্যাণপুর এলাকার মোক্তার হোসেনের ছেলে জিয়াউর রহমান নিজ জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। সেসময় তিনি ঘাসের জমিতে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান। এরপর সাপটি হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে আধামরা করেন এবং তার ভাই নাসির উদ্দিনকে ফোন দেন। পরে স্থানীয়রা সাপটিকে বটতলা এলাকায় নিয়ে এসে একটি গাছে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর সাপটির পেটে আরও বাচ্চা আছে কি না তা দেখতে পেট চেরেন স্থানীয় পশু পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক। এরপর সাপটিকে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, ঘাস কাটার সময় সাপটি তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেসময় তিনি সাহস করে হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে আধামরা করেন। এরপর ফোনে স্থানীয়দের ডাকেন তিনি। স্থানীয়রা সাপটিকে গাছে ঝুলিয়ে রেখে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
বটতলা এলাকার মুদি দোকানি মো. বকুল হোসেন জানান, সাপটি বিষধর ও ভয়ংকর। সেজন্য জনগণকে সচেতন করতে এবং পরিচিতি বাড়াতে সাপটিকে সবাই মিলে অনেকক্ষণ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। পরে এক ডাক্তার পেট চেরেন। অতঃপর পুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
এভাবে ব্লেড দিয়ে সাপটির পেট চেরা ভুল হয়েছে বলে জানান পল্লী চিকিৎসক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, সাপটির পেট মোটা ছিল। পেটে বাচ্চা আছে কি না তা দেখার জন্য সবাই তাকে পেট চেরার অনুরোধ করেছিলেন। তবে পেট কাটা তার ভুল হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে রাসেলস ভাইপার সাপের খবরে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে ঘটনাটি বন ও প্রাণী সংরক্ষণ আইনবিরোধী বলে জানান বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাহাবউদ্দিন।
তিনি জানান, বড় কোনো জনসচেনতা নেই। এভাবে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। ভবিষ্যতে এর ক্ষতিপূরণ কোনোদিন শোধ হবে না।
এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, মানুষ আতঙ্কে অনেক কিছু করে ফেলেন। সকলকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আল-মামুন সাগর/এফএ/জেআইএম