সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক
সপ্তম মেয়াদেও হলো না শেষ, কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত ঘোষণা
যমুনা নদীর তীরে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা এ মাসেই। প্রকল্পের নথিতে সেটি সমাপ্তও হয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কাগজ কলমে কাজ শেষ হলেও বাস্তবে চলছে। তবে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজীদ বলছেন এ মাসেই সব কাজ শেষ হবে।
জানা যায়, চার বছরের এ প্রকল্পটি বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দফায় রুগ্ন প্রকল্প হিসেবে এক বছর বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে রুগ্ন এ প্রকল্পটি নির্মাণে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ সহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে বলে অজুহাত সংশ্লিষ্টদের।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদীর তীরঘেঁষে ৪০০ একর জায়গায় গড়ে ওঠা শিল্প পার্ক প্রকল্পের নিজস্ব ভবনের কাজ মোটামুটি শেষ হলেও বাউন্ডারি, রাস্তা, ড্রেন, লেক ও স্ল্যাবের কাজ প্রায় ২০ শতাংশ বাকি। অপরদিকে পার্কের ভেতরে বিদ্যুতের কিছু খুঁটি বসানো হলেও গ্যাস ও পানির সংযোগের কোনো কাজই হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে কংক্রিটের ব্লক।
প্রকল্পের পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাকা রাস্তার সাব-বেজ ও ড্রেনের কাজে ভিটি বালু ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন দিয়ে করা হচ্ছে কার্পেটিং। শিডিউলে কার্পেটিং ৭৫ মিলি ধরা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ৬০ মিলি। এতে দেশের বৃহত্তর এ শিল্প পার্কের কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর সময় এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বাড়ানো হয় এক বছর। তৃতীয় সংশোধনীর সময়ও মেয়াদ বাড়ে আরও এক বছর। পরবর্তীতে ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দুই বছর।
- চার বছরের প্রকল্প ১৩ বছরেও হলো না শেষ
- সিরাজগঞ্জের শিল্পপার্কে কর্মসংস্থান হবে ১ লাখ যুবকের
- ‘এপিআই শিল্প পার্ক ওষুধ শিল্পে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে’
এতেও শেষ না হওয়ায় সপ্তমবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এ মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয় জুনের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। না হলে যেমন আছে তেমন অবস্থায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে।
এ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরপর সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার মহিদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছে। তবে কিছু কাজ বাদ থাকলেও এ মাসের ২৭ তারিখেই শেষ দেখানো হয়েছে। যার কাগজপত্র মাসের শুরুতেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের ঢাকার বিডিইএল ও মেসার্স আরাফাত কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শুধু ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের কাজ করছি। এখন পর্যন্ত এ দুটি কাজের ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ করতে আরও সময় লাগবে।
শিল্প পার্কের মূল ফটকের সামনে গড়ে ওঠা মুদি ব্যবসায়ী সোহাগ মন্ডলের দোকানে গেলে পার্কের কাজের তোড়জোড় দেখিয়ে বলেন, এ মাসেই নাকি শিল্প পার্কের কাজের মেয়াদ শেষ। দেখেন শেষ সময়ে কি জোড়াতালি দিচ্ছে। তার ধারণা, এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে করলেও আগামী দুই মাসেও শেষ হবে না।
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও বিসিক শিল্প পার্কের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজীদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের কতভাগ কাজ শেষ হয়েছে সেটি বলতে পারছি না। তবে যেভাবেই হোক এ মাসেই কাজ শেষ দেখাতে হবে। আগামী মাসের ২০ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সম্প্রসারণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অখিল রঞ্জন তরফদার জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এ মাসেই শেষ হওয়ার কথা। এটি এখনও উন্নয়ন খাতেই রয়েছে। তবে প্লট বরাদ্দ শুরু হলে রাজস্ব খাতে চলে আসবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক প্রকল্পের মেয়াদ জুনেই শেষ। প্রকল্পটি এবার শেষ করতে না পারলে যেমন আছে ঠিক সেই অবস্থাতেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে। তবে কাজ শেষ না করে বিল নেওয়ার সুযোগ নেই।
এফএ/এএইচ/এমএস