ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গুলি করে সহকর্মীকে হত্যা

নিহত মনিরুলের বাড়িতে শোকের মাতম, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ১০ জুন ২০২৪

রাজধানীর গুলশানে কূটনৈতিক পাড়ায় সহকর্মীর গুলিতে নিহত পুলিশ সদস্য মনিরুল হকের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। শোকে বিহ্বল স্বজন-প্রতিবেশীরাও।

রোববার (৯ জুন) দিনগত রাত ৩টার দিকে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে মনিরুল হকের মরদেহ। তিনি বিষ্ণুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক মাস্টারের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছোট মনিরুল।

সোমবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মনিরুল হকের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন আছেন তার স্ত্রী তানিয়া সুলতানা তন্বী। দুজন নারী তার মাথায় পানি ঢালছেন। বাবাকে খুঁজে ফিরছে দেড় বছর বয়সী ছেলে তাকি। কেঁদে চলেছে সেও।

নিহত মনিরুলের বাড়িতে শোকের মাতম, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

কিছুক্ষণ পরে সংজ্ঞা ফিরে পান তানিয়া সুলতানা। এসময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার স্বামীরে যেভাবে হত্যা করছে তাকেও (অভিযুক্ত) সেভাবে মারা হোক। আমার স্বামীকে যতটুকু কষ্ট দিয়ে মারছে, তারেও সেভাবে কষ্ট দিয়ে মারা হোক। আমার স্বামী একজন পুলিশ সদস্য। তারে কেন গুলি কইরা মারলো? আমি এর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার সন্তানের কী অইবো? আমার সন্তানরে কে দেখবো?’ বলতে বলতে আবারও জ্ঞান হারান তিনি।

আরেকটি কক্ষে বিলাপ করছিলেন নিহত মনিরুলের বোন আফরোজা আক্তার, মাহমুদা হাসান ও মাকসুদা আক্তার। আহাজারি করতে করতে তারা বলছিলেন, ‘আমার ভাইকে এভাবে মারলো কেন? সে তো মানুষের জীবন বাঁচাতে চাকরিতে গেছে, তারে মারলো কেন? আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

এদিকে ১০টার দিকে বিষ্ণুপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে মনিরুলের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নন্দন, আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহিদুর রহমান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান উদ্দিন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রানা আঞ্জু, ইউপি চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান রুকন, চাচা হুমায়ুন কবীর লিটন, সাবেক চেয়ারম্যান টিএম জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

নিহত মনিরুলের বাড়িতে শোকের মাতম, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

শনিবার (৮ জুন) দিনগত মধ্যরাতে গুলশানে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে মনিরুল হককে উপর্যুপরি গুলি করে হত্যা করেন পুলিশ সদস্য কনস্টেবল কাওসার আলী। মনিরুল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। অভিযুক্ত কাওসার আলী তার সহকর্মী।

পুলিশের সূত্র জানায়, রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায় দায়িত্ব পালনের জন্য কিছুদিন আগে পুলিশ সদস্যদের ব্রাজিল থেকে আনা এসএমটি সাব-মেশিনগান দেওয়া হয়েছে। ওই অস্ত্র দিয়ে মিনিটে ৬০০ রাউন্ড গুলি করা যায়। দায়িত্বরত কনস্টেবলের হাতে ছিল সেই অস্ত্র। সহকর্মী মনিরুলকে লক্ষ্য করে তিনি সেই অস্ত্র দিয়ে ৩৮ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার মরদেহ পড়ে ছিল বারিধারার দূতাবাস সড়কের ফিলিস্তিন দূতাবাসের গার্ডরুমের পাশের ফুটপাত ঘেঁষে রাস্তার ওপরে। ঘটনাস্থলের খুব কাছে ছিল যুক্তরাজ্য, জাপান ও চীন দূতাবাস।

নিহত মনিরুলের বাড়িতে শোকের মাতম, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ডিউটিরত মনিরুল ও কাওসারের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কাওসার মনিরুলকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মনিরুল প্রাণ হারান এবং একজন পথচারী আহত হন।

এদিকে মনিরুলের জানাজায় উপস্থিত হয়ে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাওহিদুর রহমান বলেন,‘সহকর্মীর এভাবে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জড়িত তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ ফয়েজ আহমদ বলেন, আজ সকালে নিহত পুলিশ সদস্যের বাড়িতে গিয়েছি। তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এইচ এম কামাল/এসআর/জেআইএম