শেষ হয়নি রিমালে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার, আতঙ্কে মনপুরাবাসী
ভোলার মনপুরায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার বসতঘর, দোকান পাট ও ফসলি জমি। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে শক্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি মনপুরাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে অতি জোয়ারের পানির স্রোতে ভোলার মনপুরা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১২টি পয়েন্টের নতুন ও পুরাতন ১৬৫ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে মেঘনার পানিতে প্লাবিত হয় হাজার হাজার বসতঘর, দোকান পাট, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এদের মধ্যে রয়েছে হাজিরহাটের সোনার চর, দাশেরহাট মৎস্য ঘাট বাঁধ, উত্তর সাকুচিয়ার মাস্টার হাট, আলম বাজার, দক্ষিণ সাকুচিয়ার সিভিস সংলগ্ন বাঁধ, সিরাজগঞ্জ সংলগ্ন বাঁধ ও মনপুরার পুরাতন লঞ্চঘাটসহ ১২টি পয়েন্টে এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আশিংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ৩ কিলোমিটার বাঁধ।
ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পর থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করলেও প্রায় ২ সপ্তাহ পরও এখনো সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকাবাসী।
মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সিভিস সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা দুর্লভ চন্দ্র দাস, মো. রাকীবুল হাসান, তাপস চন্দ্র দে ও মো. নূরন্নবী জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে মেঘনা নদীর অতি জোয়ারের পানির স্রোতে আমাদের এই এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে বসতঘরে পানি প্রবেশ করে। পানিতে ভেসে যায় আমাদের পুকুর-ঘেরের মাছ ও ফসলি জমি। আমরাও বেশ কয়েকদিন জোয়ারের পানিতে বন্দি ছিলাম।
তারা আরও বলেন, পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করায় আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভাঙবে আর পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করবে, এটা আমরা চাই না। আমরা চাই স্থায়ীভাবে শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হোক। যাতে ১০-১৫ বছর আমরা নিরাপদে থাকতে পারি।
মৎস্য ঘাটের মুদি ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন জানান, মৎস্য ঘাটের মুদি দোকানটি চালিয়ে তিনি তার সংসার পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু মৎস্য ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিন্তিত তিনিও।
মো. সাফায়াত হোসেন ও মো. জমিস উদ্দিন জানান, দাশেরহাট বেড়ি বাঁধের সড়কটি দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ সাকুচিয়ার ইউনিয়নের সকল মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালে বেড়িবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন কোনো পরিবহন চলাচল করতে পারছে না। এছাড়াও বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মৎস্য ঘাটের বাজারটিও এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত এই বেড়িবাঁধটি মেরামতের পাশাপাশি মনপুরা উপজেলায় স্থায়ীভাবে শক্ত বেড়ি বাঁধের দাবি জানান।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই তারা ১২টি ভেঙে যাওয়া পয়েন্ট ও ৩ কিলোমিটার আশিংক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে মেরামত কাজ। এছাড়াও মুজিবনগর ও মনপুরা উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
এফএ/এমএস