রিমাল
দুর্যোগ কাটলেও কাটেনি দুর্ভোগ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান ও হলতা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে শহর-গ্রাম সব জায়গা তলিয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়ার কারণে উপড়ে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ। ২৭ মে এমন বিপজ্জনক অবস্থায় হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।
এরপর ২৮ মে থেকে পানি কমতে শুরু করে। গাছের পাতা ও ময়লা আবর্জনা জমে নষ্ট হয়ে গেছে জলাশয়ের পানি। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তারমধ্যেই দূরন্তপনায় মাতছে শিশু-কিশোররা। এতে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুধু গ্রামাঞ্চলই নয়, ঝালকাঠি শহরের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও পাড়া-মহল্লায় এখনো পানি জমে আছে। এ পানি নর্দমায় মিশে কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতি একসপ্তাহ ধরে চলছে।
বুধবার (৫ জুন) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া বাসন্ডা, সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদীর মোহনা থেকে উৎপত্তি হয়ে কাঠপট্টি, আড়দ্দারপট্টি, পালবাড়ি, বাসন্ডা, নেছারাবাদ, পিপলিতা, চামটা হয়ে বাউকাঠি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার নদীটির দৈর্ঘ্য। বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী ভাসমান পেয়ারাবাগান হয়ে গাবখান নদী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এবং বাউকাঠি থেকে হিমানন্দকাঠি হয়ে কুড়িয়ানা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার খালের পানি পাতা পচে ও ময়লা আবর্জনায় কালো রং ধারণ করেছে।
বাউকাঠি থেকে ভীমরুলী খালের প্রবেশদ্বার খালের পানিতে কিশোররা দূরন্তপনায় সাঁতার কাটছে। তীব্র গরমে পানির রং, ঘ্রাণ চিন্তা না করেই দলবদ্ধভাবে তারা সাঁতার কাটছে। এছাড়াও কৃষ্ণকাঠি কবিরাজ বাড়ি রোড, মুসলিম পাড়া, আদর্শপাড়া, বৌ বাজার, বিশ্বরোড, কুতুবনগর, চাঁদকাঠি, রূপনগর, পূর্বচাঁদকাঠি, হাওলাদার বাড়ি, চেয়ারম্যান বাড়ি, পশ্চিম চাঁদকাঠি, সরকারি কলেজের সামনের গলি, বিশ্বরোড, বাসন্ডা ব্রিজের নিচে, আড়দ্দারপট্টি, পালবাড়ি, মদন মোহন আখড়া বাড়ির পেছনে, শীতলাখোলা, লোকনাথ মন্দির এলাকা, আমতলা গলি রোড, বাসন্ডা, ইছানীল, কির্ত্তিপাশা মোড়, কিফাইতনগর, ওমেশগঞ্জ, ইকোপার্ক সংলগ্ন আবাসনের পুকুর, কাঠপট্টি, কলাবাগান, সিটিপার্ক সংলগ্ন খাল, বাঁশপট্টি এলাকায় এখনো পানি জমে আছে। বাসিন্দাদের ঘরের সামনে এখনো হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এই পানি কলো রঙ ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের শঙ্কায় আছেন।
কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসিন্দা সালাহউদ্দিন বলেন, ঘর থেকে বের হতে হলে ময়লা-পচা পানি মাড়িয়ে যেতে হয়। এ জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হন না স্ত্রী ও সন্তানরা। নিজে বের হলেও সারা দিনের সম্ভাব্য কাজ শেষ করে ঘরে ফেরেন।
তিনি বলেন, আগে পানি বেশি থাকায় ময়লা পানি আসত না। এখন পানি কমে যাওয়ায় ময়লা পানি কালো হয়ে গেছে।
পূর্বচাঁদকাঠি এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না বেগম বলেন, পানি নেমে গেছে, কিন্তু ঘরের সামনে জমে আছে ময়লা পানি। এসব পানিতে ঘরের শিশুরা খেলা করতে চায়। এজন্য তাদের নজরদারিতে রাখতে হয়। এছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ভেসে এসে ঘর ও আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।
পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর পৌরএলাকার পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলমান আছে। সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। এর কারণ বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।
এফএ/এএসএম