দুগ্ধ খামারে তরুণদের বিনিয়োগ, বাড়ছে উৎপাদন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শামীম ফকির। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১৯ সালে তিনটি বকনা বাছুর দিয়ে দুগ্ধ খামারের যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ৪০টি গরু রয়েছে, যার মধ্যে ২০টি গাভি। এর মধ্যে ১২টি গাভি থেকে উৎপাদিত প্রতিদিন গড়ে ৮০ লিটার দুধ বিক্রি করেন তিনি।
শামীমের মতো সিরাজগঞ্জের শিক্ষিত অনেক তরুণ এই লাভজনক ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন জেলাজুড়ে বাড়ছে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা। এতে মাংসের উৎপাদনের সঙ্গে বাড়ছে দুধের উৎপাদনও।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরে জেলায় দুধের উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
শামীম ফকির জাগো নিউজকে বলেন, এ খামারে তিনি কয়েক ধাপে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এখন খামারের আকার বেড়েছে। উৎপাদনও বেড়েছে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় কিছুটা আক্ষেপ তার।
একই কথা বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক উদ্যোক্তা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি পাইনি। এজন্য ২০২১ সালে দুটি গাভি কিনে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছি। এখন আমার খামারে ২৫টি গরু রয়েছে, যার মধ্যে গাভি ১৪টি। তবে খামারে যা বিনিয়োগ করেছিলাম সেটা উঠে গেছে। যদি গোখাদ্যের দাম একটু কম হতো তাহলে আমরা বেশি লাভবান হতাম।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জে ছোট-বড় প্রায় ৩৩ হাজার গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গরু রয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি, যার প্রায় অর্ধেকই গাভি। এছাড়া জেলার শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় খামারের পাশাপাশি বেশির ভাগ বাড়িতে রয়েছে দুগ্ধজাত গাভি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এ জেলায় ৬ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়, যা চলতি অর্থবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টনে। জেলায় গড়ে প্রতিদিন ২০ লাখ ২৭ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। আর জেলায় প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে ৮ থেকে ৯ লাখ লিটার। উৎপাদিত এসব দুধ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি লিটার দুধ গড়ে ৫৫ টাকায় কেনাবেচা হয়। সে হিসেবে দৈনিক বিক্রি দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ওপরে, যা জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ।
এই জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় কয়েকশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও রয়েছেন দুধ থেকে ঘি, চিজ বা পনির, ছানা, মিষ্টি ও দইসহ বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
সিরাজগঞ্জ ‘সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট’র (এসইপি) দুগ্ধজাত পণ্য উপ-প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক আকন্দ জানান, তাদের প্রকল্পের আওতায় ১৪ জন উদ্যোক্তা মোট ২২টি দুগ্ধজাত জাত পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। তারা প্রতি মাসে প্রায় ৩০ টন চিজ, ৩ হাজার কেজি ঘিসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন। এসব পণ্য বিক্রি করে বছরে তাদের আয় হয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, এই ১৪ জন ছাড়া শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জে আরও অন্তত ১২০ জন দুগ্ধজাত পণ্যের উদ্যোক্তা রয়েছেন। তারা সবাই টেকসই পণ্য উৎপাদন পদ্ধতিতে গেলে এ এলাকার দুগ্ধজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার ১২০ কোটি টাকা ছাড়াবে।
বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটার আওতাধীন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী জানান, গোখাদ্যের দাম অনুযায়ী, অনেক কম দামেই দুধ বিক্রি করতে হয়। এজন্য অনেকে তাদের খামারের দুধ বাইরে বিক্রি করেন।
বাঘাবাড়ি দুগ্ধ কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক (সমিতি) ডা. ছাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রত্যেক মাসের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২২৫টি সমিতির মাধ্যমে দুধ সংগ্রহ করা হয়। মে মাসে প্রতিদিন ৯০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়েছে। দুধের মান অনুযায়ী প্রতি লিটার দুধ গড়ে ৫১ টাকা লিটার দরে সংগ্রহ করা হয় বলে তিনি জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি সহায়তার ফলে খামারিরা কম খরচে দুগ্ধ উৎপাদন করতে পারছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্যের উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। তবে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বড় বাজার ধরা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
এম এ মালেক/এসএনআর/এমএস