মৃত্যুর ১৫ বছর পর কবর থেকে তোলা হলো অক্ষত মরদেহ
রংপুর মহানগরীর নব্দীগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকায় মৃত্যুর ১৫ বছর পরও অক্ষত পাওয়া গেছে এক মরদেহ। রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ওই এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে কবর থেকে মরদেহটি তোলা হয়।
ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, ‘এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুনিয়ায় যারা আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলেন তাদের হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই নিয়ে থাকেন। তাদেরকে কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
জানা গেছে, ১২৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ২০১০ সালে নিজ বাড়িতে মারা যান আব্দুস সামাদ। ছিলেন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি আট ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের জনক। এরমধ্যে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রংপুর মহানগরীর নব্দীগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ চলছিল। এ কারণে সেখান থেকে কয়েকটি কবর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন স্বজনরা। দুইদিনে ৪টি কবর স্থানান্তরের পর পনেরো বছর আগের সেই পুরোনো কবরটি গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) স্থানান্তর করতে গিয়ে এ ঘটনায় অবাক হন তারা।
দেখা গেলো, অক্ষত অবস্থায় সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে মরদেহ। দ্বিতীয়বার সচোক্ষে অবিকল অভিভাবককে দেখতে পারায় অবাক মরহুমের স্বজনসহ পুরো গ্রামবাসী।
আব্দুস সামাদের ছেলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা যেদিন মারা যান সেদিন বাড়ির পাশের পুকুরে একাই তিনি গোসল করেন। এরপর তিনি পুকুর থেকে উঠে এসে চেয়ারে বসলে ওই অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের পর তাকে পাশে অন্যদের সঙ্গে দাফন করা হয়। তার শরীরের সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। শুধু শরীরের চামড়াটা শুকিয়ে গেছে।’
আরেক ছেলে জানান, তার বাবার শরীরের কোথাও কোনো পচন ধরেনি। এমনকি কাফনের কাপড়ও নষ্ট হয়নি। তাকে কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি। হজের ইহরামের কাপড় দিয়ে তাকে কবরস্থ করা হয়েছিল। যেভাবে তাকে কিবলামুখী করে রেখেছিলেন সেভাবেই কবরে ছিলেন। এটা আল্লাহর বান্দার প্রতি তার রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্থানীয় মজিবর রহমান বলেন, ১৫ বছর আগে আমরা তাকে কবরস্থ করার সময় যেভাবে দাফন করেছিলাম, সেদিন ওই অবস্থায় তার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য মরদেহের হাত-পায়ের সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভিড় জমান আশপাশের এলাকার মানুষও। তারা জানান, এলাকার সব থেকে জনহিতকর মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছিল তার।
ধাপ সাতগাড়া বায়তুল মোকাররম মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনম হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। যারা দুনিয়াতে সবকিছু ভুলে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলেন তাদেরকে কবরে সুসংবাদ দেওয়া হয়। কবর পোকা-মাড়কের ঘর হলেও তাদের কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসেবে এটা দিয়েছেন। কারণ এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যারা আল্লাহর হয়ে যান, আল্লাহ তার হয়ে যান।’
জিতু কবীর/এফএ/এমএস