ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুড়িগ্রাম

পাওনা টাকার জন্য গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, লজ্জায় আত্মহত্যা

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০৪:২৯ এএম, ০১ জুন ২০২৪

কুড়িগ্রামে পাওনা টাকার জন্য সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ লজ্জায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এক সঙ্গেই আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও বেঁচে গেছেন তার স্বামী।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের কলেজপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী আশা খাতুন (২০) ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের (২৭) ২০ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে, যা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে বাড়িঘর মেরামতের জন্য পাশের জহির মন্ডলপাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেন জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার জয়নাল টাকা চেয়ে বসেন। এসময় টাকা না থাকায় আশা খাতুন কিছুদিন সময় চেয়ে নেন।

সময় পার হলে জয়নাল আবার টাকা চেয়ে বসেন। টাকা না দিতে পারায় আশা খাতুনকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন জয়নাল। আশার পরিবার অভাবগ্রস্ত হওয়ায় তার সেই অবৈধ প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য করেন জয়নাল। এরপর তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সুযোগ বুঝে জয়নাল শুক্কুর আলী নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্কও করেন।

এরপর তাদের পরিচিত সোলেমান নামের একজনকে সঙ্গে করে তিনজন আশার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সোলেমান ফের শারীরিক সম্পর্ক করেন।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ফলে ওই গৃহবধূ অতিষ্ট হয়ে পড়েন। তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোকমুখে জানতে পারেন। তিনি স্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। ভুক্তভোগী আশা খাতুন তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলেন। স্বামী সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

আরও পড়ুন

পরে গত ২৪ মে দুপুর আনুমানিক ২টায় স্বামী-স্ত্রী লজ্জায় ঘরে থাকা কীটনাশক (বিষ) পান করেন। এরপর স্থানীয়রা দুজনকেই উদ্ধার করে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসা পেয়ে জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও আশা খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে পরিবার গত সোমবার (২৮ মে) রাতে বাড়ি নিয়ে আসেন। এরপর ২৯ মে দুপুর আনুমানিক ২টায় বাড়িতেই আশা খাতুন মারা যান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, রাজিবপুর থানার গাড়িচালক কনস্টেবল মাজাহারুল ইসলাম, থানার বাবুর্চি রবিউল ইসলাম, আমেছ উদ্দিন বিবাদী জয়নাল, শুক্কুর, আলম ও সোলেমানকে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাদী জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম টাকা না নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও উপস্থিত সবার কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এ সময় তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু বিচার না দিলে দুজনই আত্মাহত্যা করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষপান করেন তারা। এতে জাহাঙ্গীর আলম বাচঁলেও মারা যান স্ত্রী আশা খাতুন। মৃত্যুর সময় আশা খাতুন দুই বছরের একটি শিশুকন্যা রেখে যান।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে দুজনই বিষ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করেন। আশা খাতুনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন মানসিক ভারসাম্যহীন।

টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত জয়নাল।
এ বিষয়ে জানতে গাড়িচালক কনস্টেবল মাজাহারুলের ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে রাজিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মীমাংসার করার সঙ্গে থানার যে দুজন সদস্যের নাম শোনা যাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/ইএ