সিলেটে বিপৎসীমার ওপরে ৫ নদী, বন্যার শঙ্কা
সিলেটে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির মাত্রা অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর।
বুধবার (২৯ মে) সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় পাঁচটি নদীর পানি। এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনটি নদীর পানি ছিল বিপৎসীমার ওপরে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, প্রবল স্রোতের কারণে বিভিন্ন স্থানে সুরমা নদীর ডাইকে (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ডাইক পরিদর্শন করা হয়েছে। ডাইক ভেঙে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর সবকয়টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- সিলেটে তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
- সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আটকা পড়লো ৬ ফ্লাইট
- বিদ্যুৎহীন হাসপাতালে মোবাইলের আলোয় জন্ম নিলো দুই নবজাতক
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার, সারি নদীর পানি জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে ৯১ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ও ডাউকি নদীর পানি জাফলংয়ে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এর আগে বুধবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার, সারি নদীর পানি জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সুরমা নদীর ডাইকে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি ঢুকে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন
- রিমাল গেছে, পানি আটকে আছে ঢাকার পথে পথে
- সর্বোচ্চ ১১১ কিমির বেগে উপকূলে আঘাত হানে 'রিমাল'
- ঝালকাঠিতে নদী তীরবর্তী এলাকায় সাপ আতঙ্ক
বুধবার বেলা ১১টা থেকে কানাইঘাট বাজারে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করে উত্তর বাজার, দক্ষিণ বাজার ও পূর্ব বাজার তলিয়ে যায়। অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হাঁটুসমান পানি হতে দেখা গেছে। এতে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়কের গড়াইখাই সেতু থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়ক উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ২ নম্বর লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের লোকালয়সহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পৌরসভার কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা ডাইকের পাকা সড়কে পূর্বের ভাঙনের স্থানে প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।
এসব কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরিন বলেন, উজান থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সুরমা ও লোভা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
- উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিতে ৩২ লাখ শিশু: ইউনিসেফ
- মহাবিপৎসংকেত নামলেও বৃষ্টি-বাতাসের তীব্রতা কমেনি
- ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
ইউএনও আরও বলেন, সুরমা ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভেঙে পানি যাতে লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে তা মোকাবিলায় উপজেলার সবকয়টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, সিলেটের জৈন্তাপুরে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষ্মীপুর, ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঁঠালবাড়ী, নলজুরী, কেন্দ্রী, থুবাং, কালিঞ্জি, লালা, তুমইর, শেওলারটুক, বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জৈন্তাপুরের ইউএনও উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে গবাদিপশু সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
আহমেদ জামিল/এসএএইচ