ভক্তদের ধ্বনিতে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা
মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়ীতে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘কুম্ভমেলা’ বা কামনার মেলা। মহামানব গণেশ পাগলের এ মেলায় ভক্তরা আসেন পূণ্য অর্জনের জন্য। মেলাকে ঘিরে পুরো মাঠজুড়ে বসেছে সারি সারি দোকান। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দের সব জিনিসপত্র।
সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকেই দলে দলে জয় ডংকা ও নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয় হরিবল ও জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বণি করতে করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু সন্যাসী ও ভক্তবৃন্দ বাস, ট্রাক, ট্রলার ও হেঁটে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বাংলা ১৩ জ্যৈষ্ঠ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মাদারীপুর রাজৈরের কদবাড়ীর দিঘীরপাড় এলাকার মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে দেশের ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা। এই কুম্ভমেলাকে অনেকেই কামনার মেলাও বলে থাকেন।
হিন্দু ধর্মাম্বলীদের শাস্ত্রমতে সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত সুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভপাত্রে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে ভারতীয় মুনি ঋষিরা কুম্ভমেলার আয়োজন করে আসছেন।
শত বছর আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ সের চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় এলাকায় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে এখানে মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে মূল মেলা হয় এক রাতের জন্য। যা আজ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলা কখনো কখনো সপ্তাহব্যাপীও চলে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে ঘটে এ কুম্ভমেলা বা কামনার মেলায়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে মানুষ আসে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ আসে ঐতিহ্যবাহী এ কুম্ভ মেলায়। এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্ন্যাসী ও আর ভক্তরা একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারারাত মেতে থাকেন। আয়োজন করা হয় ছোট বড় অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে বাউল ও ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ভক্তদের মধ্যে ভক্তসেবা কমিটির প্রসাদ বিতরণ।
এ মেলা উপলক্ষে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে সারি সারি নানা রকমের দোকান। পুরো মেলাটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এদিকে লাখ লাখ ভক্তদের উপস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করায় যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশ বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু সন্ন্যাসী ও ভক্তরা ১০৮টি মন্দির দর্শন, প্রার্থনা, আরাধনা, পূজা-অর্চণা, ধর্মীয় সঙ্গীত, নৃত্য-বাদ্য বাজনা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করেন।
মেলা উপলক্ষে ৭ দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন দোকানিরা। বাঁশ বেতের শিল্প কারুকাজ খচিত গৃহস্থালী মালামাল, মৃৎ শিল্প, বাহারী মিষ্টি, দৃষ্টি আকর্ষণীয় খেলনা ও বাহারী প্রসাধনী পণ্য সাজিয়ে বসেছে কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক বিভিন্ন ধরনের স্টল।
মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রম সংঘের সভাপতি মিরণ বিশ্বাস বলেন, মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য চিড়া, গুড়, চাল, ডাল ও খিচুড়ি প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুদ আলম বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষার জন্য তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শতাধিক পুলিশ বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত আছে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এফএ/জিকেএস