নওগাঁয় প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান
নওগাঁর রাণীনগরে প্রাচীন চারটি বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান মিলেছে। উপজেলার উজালপুরে প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপনা আবিষ্কার করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যাদুঘরের গাইড লেকচারার প্রত্নতত্ত্ব গবেষক মোহাম্মদ আবু আল হাসান। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নওগাঁয় রয়েছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, হলুদ বিহার ও জগদ্দল বিহার।
নতুন মাত্রায় যোগ হতে যাচ্ছে নতুন আবিষ্কৃত রাণীনগরের বৌদ্ধ বিহার। এলাকাবাসী বিহারটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নেয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান, বিহারটি আবিষ্কৃত হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে এবং বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামে গবেষক মোহাম্মদ আবু আল হাসান প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে নিজ উদ্যোগে ৬ সদস্যের একটি টিম নিয়ে খনন কাজ করছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। সবসময় প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের সন্ধানে থাকেন নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য। দীর্ঘদিন থেকে নওগাঁয় প্রত্নতত্ত্ব নির্দশন অনুসন্ধানের কাজ করছেন। জেলার উত্তরের স্থানগুলোতে প্রচুর প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাইে কোনো প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন আবিষ্কার হয়নি।
গবেষক মোহাম্মদ আবু আল হাসান বলেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ দু-উপজেলায় নিদর্শন অনুসন্ধান শুরু করা হয়। প্রায় দেড় বছর প্রত্নতাত্ত্বিক অনুন্ধান চালানোর পর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নে ৪টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সন্ধান পাই। উপজেলার একডালা ইউনিয়নে রাজাপুর ঢিবি, দিঘীর পাড় দ্বীপ, ঘোড়াপাতা এবং উজালপুর গ্রামে। এরপর প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরকে অবহিত করি। প্রথমত একটি বিহার উজিরপুর ঈদগাহ মাঠে উৎখননের আবেদন করি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে তারা খননের অনুমতি প্রদান করে।
তিনি বলেন, সাধারণত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো উঁচু ঢিবির হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ উজিরপুর দ্বীপে বর্তমান যে অবস্থা আছে পূর্বে তার থেকে ৫ ফিট উঁচু ছিল। অর্থাৎ ১৫ থেকে ১৭ ফিট। গত দু বছর আগে ৪০ দিনের কর্মসূচি আওতায় দ্বীপটি কেটে নিচু করা হয়। দ্বীপের পশ্চিম পার্শে ঈদগাহ এবং পূর্বপাশে মাদ্রাসা করা হয়।
এখানে অনুসন্ধান চালিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষামূলক একটা গর্ত করা হয়। যার মাধ্যমে বুঝতে পারি এখানে বড় আকারের একটা স্থাপত্য লুকিয়ে আছে। চলতি মাসের ১০ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করি। ১০ দিনের মাথায় প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন স্বরূপ ইটের দেয়াল কাঠামো বেরিয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে যে কাঠামোটি বেরিয়ে এসেছে সেটা দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটা পাল যুগের। অর্থাৎ দেড় হাজার বছর আগের। এই বিহারের সঙ্গে জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের অবকাঠামোর যথেষ্ট মিল রয়েছে। এখানে খনন কাজ করতে গিয়ে চিনামাটির বদনা, বাটি ও মূর্তি পাওয়া গেছে। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা খুবই ধীর প্রকৃতির এবং দীর্ঘদিনের সময়ের প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে যেটা মনে হচ্ছে ২-৩ বছরের গবেষণায় এখানকার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়া যাবে।
স্থানীয় বয়জ্যেষ্ঠ নজরুল ইসলাম জানান, আমার বাবার দাদারা এই দ্বীপটি দেখেছেন। দ্বীপটি কোনো ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন হতে পারে তা আমরা কখনোই ভাবিনি। দ্বীপে বছরে দু’টি ঈদের নামাজ পড়া হয়। বর্তমানে এটি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে জেনে আমরা আনন্দিত।
এছাড়া স্থানীয় আফছার আলী, জাহাঙ্গীর আলম, বিপ্লব সরদার, সিদ্দীক ও ইউনুছ আলী জানান, কাছেই যেহেতু রবীন্দ্র পতিসর। এটাকে কেন্দ্র করে আরো পর্যটকদের বিস্তৃতি লাভ করবে বলে আশাবাদী। এখানে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। আপাতত ব্যক্তি উদ্যোগে খনন কাজ শুরু হয়েছে। এ ধরনের বিহারের খনন অনেক ব্যয় বহুল। বিহারটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নেয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পতিসর, গান্ধী আশ্রম, পাহাড়পুরসহ জেলায় অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া নতুন যে বিহারগুলো আবিষ্কৃত হচ্ছে এই পুরাকীর্তিগুলোকে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের আওতায় এনে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে নওগাঁ একটি পর্যটন শিল্পে পরিণত হবে।
আব্বাস আলী/বিএ