একসঙ্গে পাউবোর ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর রহস্যময় বদলির আবেদন
পাবনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি চেয়ে একসঙ্গে মহাপরিচালকের কাছে গণ আবেদন করেছেন। গত ৯ মে তারা আবেদন করেন। নির্বাহী প্রকৌশলীসহ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে কিছু ঠিকাদারের দ্বন্দ্বের জের ধরে এ গণ বদলির আবেদন বলে জানা গেছে।
সমালোচনার মুখে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেরটিসহ এ গণ বদলি ঠেকাতে ৮ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে গত দুদিন ধরে ঢাকায় তদবির করছেন।
বুধবার (১৫ মে) সারাদিন পাউবো বেড়া অফিসে আনসার সদস্য এবং কয়েকজন পাহারাদার ছাড়া তেমন কেউ ছিল না। ২-৩ জন কর্মচারি কিছু সময় থাকলেও পরে তারা চলে যান।
গণ বদলির আবেদনের কারণ সম্পর্কে পাউবোর কোনো কর্মকর্তা কোনো সুস্পষ্ট জবাব দেননি। গণ বদলির আবেদনের বিষয়টি নিয়ে পাবনা জেলা জুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকার কাজ বাস্তবায়ন ও লেনদেন নিয়ে কতিপয় ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে ৩৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেন। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন ‘একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিব্রত, হয়রানি, মানসিক, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে নামে বেনামে মিথ্যা, হয়রানি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পত্র পাঠিয়েছেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের বিব্রতকর জবাবদিহি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’ এমন পরিস্থিতিতে কাজের পরিবেশ নেই দাবি করেন তারা।
জানা গেছে, কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বর্তমান কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সুবিধা আদায় করতে না পেরেই একযোগে বদলির আবেদন করেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা। তবে কিছু কর্মচারি বাধ্য হয়ে আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে। কর্মচারীদের অনেকেই জানেন না বদলির আবেদনে কী লেখা হয়েছে।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর বদলির আবেদন প্রত্যাহার করতে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বাপাউবো) যান।
বুধবার (১৫ মে ) দুপুরে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তাদের রুম তালাবদ্ধ। তবে তিনজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অফিস করছেন। বেশিরভাগ কর্মচারীও অফিসে নেই। কর্মকর্তারা না থাকায় এবং অফিস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কোনো কাজকর্ম হয়নি।
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী রাকিবুল ইসলাম, তাউফিকুর রহমান ও অফিস সহায়ক মজিবুর রহমান বলেন, কর্মকর্তারা আবেদনে স্বাক্ষর করতে বলায় আমরা স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আবেদনে কী লেখা আছে বলতে পারি না।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান বলেন, কর্মকর্তারা অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবেদনের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
তারা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে তারা কথা বলবেন না।
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী তার কার্যালয়ে ছিলেন না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারও ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকায় একটি মিটিংয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ৯ জন একসঙ্গে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে তিনি জানেন না। ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি চাওয়ার আবেদন ডিজি মহোদয় বরাবর দিয়েছেন বলে শুনেছেন। তবে অফিসিয়ালি কোনো ডকুমেন্ট তিনি পাননি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এএসএম