প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকদের অসন্তোষ, তোপের মুখে বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা
ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর লম্বা ডিজিটে রিচার্জ, অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসন জেলার বর্তমান সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেখানে নাগরিকদের তোপের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে, জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে সেগুলো সমাধানে সরকারের উচ্চমহলে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ সদরে পিডিবির উত্তর ও দক্ষিণ এলাকায় গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার। এর মধ্যে পিডিবি নিজস্ব উদ্যোগে ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সংস্থা আরও ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪০টি মিটার স্থাপনের কাজ করছে। এরই মধ্যে ৪৭ হাজার মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৩ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও সেটি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে সম্প্রতি। তবে মিটার স্থাপনের পর থেকে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা, যা রীতিমতো জনঅসন্তোষের কারণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগের’ দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ভুক্তভোগী নাগরিক ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিকরা প্রিপেইড মিটারের নানা জটিলতার কথা তুলে ধরে জনভোগান্তি দূর করতে স্মার্ট প্রযুক্তি চালুর দাবি জানান। আলোচনায় মূল সমস্যা হিসে উঠে আসে রিচার্জ করতে গিয়ে ১০০ থেকে ২০০ বা তার চেয়েও বেশি ডিজিট চাপতে গিয়ে মিটার লক হয়ে যাওয়া, রিচার্জের সঙ্গে সঙ্গে টাকা কেটে নেওয়া, পোস্টপেইড মিটারের চেয়ে প্রিপেইড মিটারের খরচ বেড়ে যাওয়া, ডিমান্ড চার্জ, মিটারে লোড বাড়াতে ভোগান্তিসহ নানা বিপত্তির চিত্র। ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লীবিদ্যুতের লোকসান ৫২৪ কোটি
প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, নাগরিক আন্দোলনের অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন, সাংবাদিক নিয়ামুল কবীর সজল, নারী ফোরামের আহ্বায়ক সৈয়দা সেলিমা আজাদ, ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী, রাইস মিল সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান, শিক্ষক আনোয়ারুল কবীর প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলেছে। টাকা লোড করতে গ্রাহককে ২০ থেকে ৩২০টি ডিজিট চাপতে হয়। টাকা লোড করার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত বিল কেটে নেওয়া হচ্ছে। টাকা শেষ হলেই বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিল বেশি যাচ্ছে।
এসময় প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে জনগণের উপকারিতা ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রিপেইড মিটার সহজীকরণের দাবি জানান বক্তারা।
পরে গ্রাহকের নানা অভিযোগের জবার দেন পিডিবির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২) ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিত দেবনাথ ও নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগ-২) ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত রায়।
তারা বলেন, প্রিপেইড মিটার জনগণের কল্যাণে স্থাপন করা হচ্ছে। এটি সরকারের প্রকল্প।
প্রিপেইড মিটারে টাকা লোড দিতে লম্বা ডিজিট নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও লোড কম-বেশি নিয়ে কর্মকর্তারা জানান, গরমকালে গ্রাহকের লোড বেশি হলে (৩ কিলোওয়াট থেকে ৮ কিলোওয়াট) আবেদনের মাধ্যমে শীত মৌসুমে লোড কমানোর সুযোগ রয়েছে। প্রিপেইড মিটারে একজন গ্রাহক যখন যেমন লোড চাইবেন, তাই পাবেন। আর সে অনুযায়ী প্রতি কিলোওয়াটে ৪২ টাকা কেটে যাবে। এছাড়াও প্রতিমাসে মিটার ভাড়া ৪০ টাকা এবং ১০ শতাংশ ভ্যাট কেটে নেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহক শ্রেণি অনুযায়ী বিদ্যুতের বিল কেটে নেওয়া হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম/কেএএ/