যশোরে দড়াটানায় নতুন সেতু, সওজের তিন চ্যালেঞ্জ
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র ভৈরব নদের ওপর দড়াটানা ব্রিজটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কেমন হবে সেই সেতু, তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। নতুন সেতু নির্মাণে ‘তিন চ্যালেঞ্জকে’ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এগুলো হচ্ছে নীতিমালা মেনে যথাযথ দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা রক্ষা, নদের দুই প্রান্তে পাঁচ সড়কের সংযোগ এবং নান্দনিকতা। নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে সেতুটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ হত্যায় ভূমিকা রেখে চলেছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট। এর মধ্যে যশোর সদরে রয়েছে ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি। আর এই ব্রিজগুলোর মধ্যে এলজিইডির ২৩টি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৪টি, রেলওয়ের ১টি, বিএডিসির ৩টি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের ১টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার ১৯টি ব্রিজ রয়েছে। বর্তমানে ম্যাপ অনুযায়ী নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩০০ মিটার রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার। এসব ব্রিজের কারণে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে দড়াটানা ব্রিজও ভৈরবের গলার কাঁটা। মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।
এই দড়াটানায় ভৈরব নদের নতুন সেতু নিয়েই এখন চলছে জোর আলোচনা। কেমন হবে দড়াটানার নতুন সেতু, তা নিয়ে যশোরবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। তবে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে সেতুটি নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সূত্র জানিয়েছে, দড়াটানায় ভৈরব নদের ওপর এখন মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজ রয়েছে। সেটি ভেঙে নির্মাণ করা হবে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। এই সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নীতিমালা মেনে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী সেতুর একটি নির্ধারিত উচ্চতাও রয়েছে। কিন্তু সেই উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে হলে দু’প্রান্তে যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শহরের প্রাণকেন্দ্রের সেতু হওয়ায় এটির জনগুরুত্ব যেমন সবচেয়ে বেশি, তেমনি এটি দৃষ্টিনন্দন হওয়াও প্রয়োজন। ফলে তিনটি বিষয় মাথায় রেখে দড়াটানা সেতুর নকশা প্রণয়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, যেহেতু ব্রিজের একপাশে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল রয়েছে, হাসপাতালের সামনে দিয়ে একটি সড়ক চলে গেছে। এই প্রান্তে মূল সড়কটি জেল রোড হয়ে খাজুরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেছে। ব্রিজের অপর পাশে একটি সড়ক গেছে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের দিকে, আরেকটি মুজিব সড়ক হয়ে চাঁচড়ার দিকে এবং অপরটি গাড়িখানা সড়ক হয়ে চৌরাস্তার দিকে। ফলে নকশার সময় ব্রিজের দু’প্রান্তের এই পাঁচটি সড়কের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। আবার দুই প্রান্তের পরিসর কম হলেও ন্যূনতম ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির উচ্চতার বিষয়টিও আমলে রাখতে হবে। অর্থাৎ এক প্রান্তের ভূমি থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় তুলে আবার অপর প্রান্তের ভূমিতে মিলিত হতে হবে।
মৌলিক এই দু’টি বিষয়ের পাশাপাশি সৌন্দর্যের বিষয়টিও নজরে রয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষের। কারণ শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই ব্রিজটি যেনো দর্শনীয় হয় সেটিও তারা বিবেচনায় রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, ভৈরব নদের দড়াটানা ব্রিজটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। সেতুটি নির্মাণে বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নকশা প্রণয়ন করতে হবে। প্রথমত দু’পাশে জায়গা অনেক কম, আবার অনেকগুলো সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এছাড়া সেতুর উচ্চতার একটি নীতিমালা রয়েছে। এইসব বিষয় বিবেচনার পাশাপাশি নির্মাণশৈলীও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। জনগুরুত্বসহ সবকিছু বিচার বিবেচনা করেই দড়াটানা সেতুটি নির্মাণ করা হবে বলে জানান সওজ’র এই কর্মকর্তা।
এফএ/এমএস