শিক্ষার্থী সংকটে একীভূত হওয়ার পথে রংপুরের ৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়
রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৫০ শিক্ষার্থীর চেয়ে কম আছে এমন ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একীভূত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এমন একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
গত দশ বছরের পরিসংখ্যানে ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। তালিকা আরও সংযোজন অথবা বিয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রংপুর বিভাগে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৪৪টি।
একই স্থানে একের অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, দূর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুসম্পর্কের অভাব, নদীভাঙন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংকট দেখা দেয়। যা চলে বছরের পর বছর। এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত দশ বছর ধরে ৫০ শিক্ষার্থীর চেয়ে কম আছে এমন প্রাথমিক বিদ্যালয় চিহ্নিত করে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয়।
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে ৮ জেলার মধ্যে একীভূতকরণের জন্য তালিকাভুক্ত করা ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ জন, ওই জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার তেকানী রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১ জন এবং একই উপজেলার হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩ জন।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রাঘবপুর রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫ জন, একই উপজেলার পি.এ রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ জন ও পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার কে.আর.এস মাগুড়া সরকার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৮ জন, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ঘোনা বিছানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩০ জন এবং রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার শংকুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সালে যমুনা নদীবেষ্টিত চরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারিকরণ হয় ১৯৭৬ সালে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, নদী ভাঙনের কারণে স্কুলের আশেপাশে আবাদের উপযোগী তেমন জমি নেই। অনেক পরিবার বাড়ি ভেঙে অন্য এলাকায় চলে গেছে। গত চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি, বসতি গড়ে উঠলে শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি।
নুরুল হুদা আরও বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থান কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত এবং গাইবান্ধা জেলার মাঝামাঝি প্রত্যন্ত এলাকার চরে। তাই বসতি গড়ে না উঠলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে ২৪ জন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার কেআরএস মাগুড়া সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহসান হাবীব বলেন, তার বিদ্যালয়ের আশেপাশে বাড়ি আছে প্রায় ৬৬টি। আবার প্রতি বাড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার মতো শিক্ষার্থী নেই। এছাড়াও বিদ্যালয়টির দুই কিলোমিটার থেকে সোয়া দুই কিলোমিটারের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
আহসান হাবীব আরও বলেন, ২০২০-২১ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রায় ১ বছর ৪ মাস প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এটিও একটি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
আহসান হাবীব বলেন, এখনো চূড়ান্ত কাগজ না পেলেও যতদূর জানতে পারছি আমাদের বিদ্যালয়টি মাগুড়া প্রধানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী আছে ২৮ জন। এটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত।
এই তালিকাভুক্ত ৮ বিদ্যালয় ছাড়াও বিভাগের আট জেলায় আরও ১৬টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এর নিচে নেমেছিল। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় অভিভাবক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও এবং গাইবান্ধা জেলায় ৩টি করে, রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলায় ২টি করে এবং নীলফামারী জেলায় ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
আগে শিক্ষার্থী কম থাকলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে এমন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তাহিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালিদা আক্তার বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা হচ্ছে ৭৬ জন। যা আগে ছিল ৪৩ জন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। আগে থেকে বিদ্যালয়টির ৫ কিলোমিটারের মধ্যে মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা সন্তোষজনক থাকলেও একটা সময় এখানে কোনো নিয়োগকৃত শিক্ষক ছিল না। এমনকি দীর্ঘসময় তাকে একাই অনেকদিন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়াসহ দাপ্তরিক কাজ করতে হয়েছে। ফলে বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থী অনেক কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আয়তন এবং বিদ্যালয়ের সংখ্যা বিবেচনায় অন্য বিভাগের চেয়ে রংপুর বিভাগে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভালো। মাত্র ২৪টি বিদ্যালয়ে ৫০ জনের নিচে শিক্ষার্থী আছে। তবে এরমধ্যে ১৬টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে উল্লেখিত ৮টি বিদ্যালয়ে কোনোভাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারছি না।
এফএ/জিকেএস