মেয়েকে গলাটিপে হত্যার পর বিদ্যুৎস্পৃষ্টের নাটক সাজান মা
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে সাত বছরের এক শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যায় বলে সবাই জানলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। আসলে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। আর সেই রহস্য উদঘাটন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান নিজেই।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে খুব সকালে পুলিশ সুপার নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে (পিও ভিজিট) যান। এরপর কৌশলে খুনি মাকে এসপি নিজের গাড়িতে করেই পুলিশ হেফাজত নিয়ে আসেন। তারপর প্রমাণ হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইলবগাদি গ্রামের শিশু মাইশা খাতুন (৭ বছর) বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায়নি, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। আর মাইশাকে অন্য কেউ নয়, তার নিজের মা তাকে গলা টিপে হত্যা করে।
এ ঘটনায় ঘাতক মা পপি খাতুনকে (২৫) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পপি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (০৬ মে) বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
তিনি জানান, শিশু মাইশা তার মায়ের সঙ্গে আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে মাইশার মা পপি খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসেন। সেসময় মাইশার গলায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল। পপি প্রতিবেশীদের জানান, তার মেয়ে মাইশা বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছে। প্রতিবেশীরা মাইশাকে দ্রুত নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে মাইশাকে মৃত্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি চিকিৎসকরা নিহত মাইশার গলায় দাগ থাকার কথাও পুলিশকে জানান।
পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নিহত মাইশা খাতুন বিদ্যুতস্পর্শে মারা যায়নি। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি পুলিশ নিহতের পরিবারকে জানালে মাইশার নানা ভোগাইলবগাদী গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে গত ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সুপার জানান, মাইশাকে তার মা পপি খাতুন গলা টিপে হত্যা করেছেন। গত ৫ মে পপি খাতুন আলমডাঙ্গার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহুরা বেগমের আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ পপি খাতুনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, পপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। দাম্পত্য কলহের কারণে আগেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল এবং পপি খাতুন তার মেয়ে মাইশাকে নিয়ে বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করছিলেন।
পপি খাতুন পুলিশের কাছে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে মাইশা নাবালিকা। তার বাবা হয়তো আরেকটি বিয়ে করবে। পপিরও অন্য জায়গায় বিয়ে হতে পারে। তখন মাইশাকে দেখার কেউ থাকবে না। মাইশার জীবন কাটবে কষ্টে। প্রতিবেশীদের একটি মেয়েকে এভাবে বড় হতে দেখেছে পপি। এসব চিন্তাভাবনা করে পপি মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেললে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, ডিআই-১ ইন্সপেক্টর জিহাদ খান, উপপরিদর্শক (এসআই) বিকাশ দাসসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।
হুসাইন মালিক/এফএ/এমএস