ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাজশাহীতে সড়ক উন্নয়নে কোপ ২৬১৬ গাছে

সাখাওয়াত হোসেন | রাজশাহী | প্রকাশিত: ০৮:২৫ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সড়ক-মহাসড়ক প্রয়োজন, তবে সেটা পরিবেশ বাঁচিয়ে। সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর সড়ক উন্নয়নে চলছে একটি বড় প্রকল্পের কাজ। কোনো পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে কেটেছে দুই হাজার ৬১৬টি গাছ। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী এসব ছায়াদায়ী গাছ কাটায় শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।

চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে দিনের তাপমাত্রা প্রতিদিনই পোড়াচ্ছে নগরবাসীকে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। গাছ না কেটে আমরা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প চিন্তা করতে পারি না। এমনটার ব্যত্যয় ঘটায়নি রাজশাহী সিটি করপোরেশনও। প্রকল্প বাস্তবায়নে আড়াই হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়েছে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে একটি গাছ কাটলে তার পরিবর্তে কমপক্ষে তিনটি গাছ লাগানোর নিয়ম (বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন ২০২২) আছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এমন আচরণ পরিবেশের সঙ্গে নিষ্ঠুর বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হতে পারে।

বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে একাধিক পুরস্কার পেয়েছে ‘গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি’ রাজশাহী। সড়ক উন্নয়ন করতে গিয়ে সেই সবুজ নগরী পরিণত হচ্ছে কংক্রিটের জঞ্জালে। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কের দুই পাশে ছিল বড় বড় সব গাছ। সড়ক ছিল সবুজ টানেলের মতো। ছায়া সড়কে ছিল অন্যরকম শীতল অনুভূতি। প্রায় শেষের পথে থাকা প্রকল্পের বর্তমান চিত্র ভিন্ন। রাস্তার দুপাশ রীতিমতো খাঁ খাঁ করছে। বড় কোনো গাছের অস্তিত্ব চোখে পড়ে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কিছু গাছ লাগিয়েছেন বললেও আদতে সেগুলো সৌন্দর্যবর্ধনের গাছ। ছায়া-শীতল করার জন্য খুব বেশি ভূমিকা রাখবে না।

রাজশাহীতে সড়ক উন্নয়নে কোপ ২৬১৬ গাছে

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদি বড় প্রকল্প পায় রাসিক। এরপর সেটি বাস্তবায়নে পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই কাটা হয়েছে দুই হাজার ৬১৪টি গাছ।

এর মধ্যে নগরীর বন্ধ গেট থেকে সিটি হার্ট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে কাটা হয়েছে ৮৮৭টি গাছ, তালাইমারী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ৬২১টি, ভদ্রা থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল সড়ক উন্নয়নে ৪৯৮টি, পোস্টাল একাডেমি থেকে ম্যাচ ফ্যাক্টরি উন্নয়নে ১৬৩টি ও রাজশাহী-নওহাটা আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নে কাটা পড়ে ৪৪৫টি গাছ।

আরও পড়ুন

পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে সিটি করপোরেশন বলছে, বন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। তবে বন অধিদপ্তর বলছে, তারা শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করে, গাছ কাটার কোনো অনুমতি দেয় না।

রাজশাহীতে সড়ক উন্নয়নে কোপ ২৬১৬ গাছে

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এ প্রকল্পটি আগামী জুলাই মাসেই শেষ হবে। কাজও শেষ পর্যায়ে। কিছু ফ্লাইওভার বাদে সব কাজই শেষ করেছি। এ প্রকল্প এখন রিভাইস ও দুই বছরের জন্য বাড়ানোর আবেদন পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের জন্য যে গাছ কাটা হয়েছে সেগুলো আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই কেটেছি। এছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন অংশে ৪৪ হাজারেরও বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি এ প্রকল্প শেষে সে সব অঞ্চলেও গাছ লাগানো হবে।’

তবে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ বলেন, ‘কোনো গাছ কাটার দরকার পড়লে সেটি আমাদের জানানো হয়। আমরা শুধু গাছের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারি। কে সেটি কাটবে বা রাখবে সেটি তারা করবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পের নামে বৃক্ষ নিধন হুমকিতে ফেলবে রাজশাহী নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলার) সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রয়োজন আছে, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন টেকসই হয় না। সিটি করপোরেশন যদি গাছগুলো রেখে প্রকল্পের কাজ করতো তাহলে ভালো হতো। যদি সেটি না হয় তবে যে এলাকায় কাজ হবে সেখানে তিন বছর বা তার আগে কিছু গাছ লাগিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয় আর কী, বাস্তবায়নের সময় পরিবেশের ধার ধরা হয় না।’

রাজশাহীতে সড়ক উন্নয়নে কোপ ২৬১৬ গাছে

‘পরিবেশকে বিরতিতে রেখেই তারা এটি বাস্তবায়ন করে। সেগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প যেমন টেকসই হয় না, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি করে। খেয়াল করলে দেখবেন সারা দেশেই এবছর তাপমাত্রা বেড়েছে। আমাদের যে গাছগুলো আছে এগুলো যদি আমরা কেটে ফেলি তবে রাজশাহীর তাপমাত্রা আরও বড়বে। তাপমাত্রার কারণে হয়তো রাজশাহী বসবাস যোগ্যতা হারাবে। সেজন্য যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে হলে এগুলো মাথায় রেখেই করতে হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এসডিজি স্বাক্ষরকারী দেশ। টেকসই মানে আমাদের পূর্বপুরুষ যে প্রকৃতি রেখে গেছে তা কমাবো নয়। বরং বাড়াবো। উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রেখে। এটি ধ্বংস করে নয়। কিন্তু যখন আমরা উন্নয়ন করি তখন এটি কোনোভাবেই মানি না। আগামী প্রজন্মের কাছে ভয়াবহ অন্যায় করে এটি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গাছ লাগাতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। গাছ লাগালে কিছুটা ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হবে। এভাবেই উৎসাহিত করতে হবে।’

সাখাওয়াত হোসেন/এএসএ/জিকেএস