ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গরু চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বেই বাবা-ছেলেকে হত্যা

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

গরু চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত। মিয়ানমার থেকে আসা এসব গরু কয়েক হাত ঘুরে পৌঁছায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে। চোরাচালানে রাজনৈতিক নেতা, ডাকাত, ব্যবসায়ী, শ্রমিক থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।

গরু চোরাচালানের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা কেন্দ্র করে পাহাড়ি ডাকাতদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব, জাফর আলম এবং তার ছেলে সেলিম। এ ঘটনায় আলাদা মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে এক সপ্তাহ।

জানা যায়, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন কয়েকশ গরু অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলা, লেবুছড়ি, চাকঢালাসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আনা এসব গরু বুঝিয়ে দেওয়া হয় গর্জনিয়া পাহাড়ের শীর্ষ ডাকাত হিসেবে পরিচিত, ডজনখানেক মামলার পলাতক আসামি শাহীন গ্রুপকে।

শাহীন তার বাহিনী দিয়ে এসব গরু ফুলতলা, লেবুছড়ি হয়ে ব্যাঙডেবা, থোয়াইঙ্গাকাটা, মাঝিরকাটা ও বড়বিল হয়ে বাইশারি সীমান্ত কিংবা জোয়ারিয়ানালা পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আবার বাইশারি সীমান্ত দিয়ে কালিরছড়া, ঈদগাঁও পর্যন্ত পৌঁছে দেন শাহীন বাহিনীর এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবছার ডাকাত এবং ঈদগড়ের রুস্তম ডাকাত ওরফে রুস্তম মেম্বার। পরে এসব গরু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি গরুর জন্য ৮-১০ হাজার টাকা পায় ডাকাতদল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব গরু চোরাচালানের সঙ্গে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া উঠে এসেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই আব্দু শুক্কুরের নাম। এছাড়া কচ্চপিয়া ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ শাকিল সিকদার প্রকাশ, শাকিল মেম্বার ও যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন সোহেল সিকদারের নামেও রয়েছে অভিযোগ। সীমান্ত পার করার পর পাহাড়ি যেসব পথ দিয়ে গরু পাচার হয় সেখানে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। পুলিশের হয়ে সোহেল নামে আরেক যুবক টাকা তোলেন বলে অভিযোগ।

জানা যায়, গত রমজানে টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বাহিনী প্রধান শাহীনের সঙ্গে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আবছারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর আলাদা বাহিনী গড়ে তোলেন আবছার। পরে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ২৮ রমজান থোয়াইঙ্গাকাটা এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে আবছার বাহিনীর সদস্য আবু তালেব নিহত হন।

এ ঘটনার পর আবছার ঈদগড় ও আশপাশের চিহ্নিত ডাকাতদের একত্রিত করে বাড়ান নিজের বাহিনীর আকার। এরপরই শাহীন বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে আবছার গ্রুপ। এরই জেরে ২১ এপ্রিল দিনগত রাতে থোয়াইঙ্গাকাটা এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে শাহীনের বিশ্বস্ত শ্রমিক হিসেবে পরিচিত সেলিমকে হত্যা করে আবছার বাহিনী। ওইদিন রাত বারোটার দিকে সেলিম একটি দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় মুখোশধারী ২৫-৩০ জনের গ্রুপ অতর্কিত হামলা চালিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বাবা জাফর আলমকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

চোরাচালানে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব কাজে আমি কখনো জড়িত নই। এক বছর আগে থেকে আমার নাম ব্যবহার করার বিষয়টি আমি জেনেছি। সে সময় কেউ আমার নাম ব্যবহার করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলে রেখেছিলাম। সেখানে আমার ভাই থাকলেও বাদ না দিতে বলেছিলাম।’

তার দাবি, চোরাচালানে তার অনুসারী হিসেবে যাদের নাম আসছে তারা স্থানীয় এমপিরও অনুসারী।

কচ্চপিয়া ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ শাকিল সিকদার প্রকাশ, শাকিল মেম্বার ও যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন সোহেল সিকদার তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘হয়তো কেউ কেউ আমাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। অথচ আমরাই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি।’

গরু চোরাচালানে জড়িত নয় দাবি করলেও নিজেকে গাছ ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন শাকিল মেম্বার।

এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, ‘বাবা-ছেলে হত্যার ঘটনায় আবছার ও জাহাঙ্গীর নামে দুই ডাকাতের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আর ২০-২৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত জাফরের ছেলে রুম্মান উল্লাহ। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’

চোরাচালানিদের কাছ থেকে গরুপ্রতি টাকা পাওয়ার বিষয় অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘পাচারকারীদের সহযোগিতার প্রশ্নই আসে না। পুলিশের নামে কেউ টাকা নেওয়ার কথা বললে তা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে পুলিশের কোনো কাজ নেই। তারপরও পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সায়ীদ আলমগীর/এএসএ/জিকেএস