ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

হবিগঞ্জে কাবিখার সোয়া ২ কোটি টাকার ফাইল গায়েব

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন | হবিগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির (কাবিখা) ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল (বাজার মূল্য ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা) বরাদ্দের ফাইলটি গায়েব হয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দের ফাইলটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বরাদ্দে ৪টি ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের কাজ ছিল।

প্রকল্পগুলোতে কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠার পরই ফাইল গায়েব হয়ে যায়। দুর্নীতির অভিযোগে ইকবাল মিয়া নামে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু বাকিরা রহস্যজনক কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

সচেতন মহলের ধারণা, অন্য ৩ ইউপি চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ঢাকতেই প্রভাবশালী মহলের ইশারায় ফাইলটি গায়েব করা হয়েছে। শুধু প্রকল্প অফিস নয়, চেয়ারম্যানদের কাছেও কোনো কাগজপত্র নেই বলে তারা জানিয়েছেন।

পিআইও অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কাবিখা প্রকল্পের অধীনে লাখাই উপজেলার করাব, বুল্লা, মুড়িয়াউক ও বামৈ ইউনিয়নে ২টি করে মোট ৮টি রাস্তা এবং মুড়িয়াউক ইউনিয়নের একটি স্কুলের মাঠের উন্নয়নের জন্য ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। সম্প্রতি বামৈ ইউপির সাবেক সদস্য (মেম্বার) মো. ইকবাল মিয়া বামৈ ইউনিয়নের দুইটি রাস্তার কাজ না করেই ১২০ মেট্রিক টন চাল (যার মূল্য ৪৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে বামৈ ইউপির চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন ফুরুক মিয়া ও লাখাই উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নূরসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়। এরপরই একে একে বের হতে থাকে থলের বিড়াল।

হবিগঞ্জে কাবিখার সোয়া ২ কোটি টাকার ফাইল গায়েব

অনুসন্ধানে জানা যায়, করাব ইউনিয়নে দুটি রাস্তার জন্য ১৪৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প দুটি হচ্ছে শিমুলবাড়ির পুল থেকে আগাপুরের প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত একটি রাস্তা এবং প্রাইমারি স্কুলটি থেকে বেলেশ্বরী নদীর পাড় পর্যন্ত আরেকটি রাস্তা। এ দু’টি প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ।

আগাপুর গ্রামবাসী জানান, উল্লিখিত রাস্তা দুটি গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মিত হয়। পরে উপজেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। অথচ এ দুটি রাস্তাকেই কাবিখার অধীনে দেখানো হয়েছে।

অপরদিকে মুড়িয়াউক ইউনিয়নে দুটি রাস্তা সংস্কারে ১৩৫ মেট্রিক টন ও স্কুলের মাঠ সংস্কারে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে সাতাউক থেকে নখলাউক পর্যন্ত রাস্তা এবং সুনেশ্বর থেকে তেঘরিয়া গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। অপরটি স্থানীয় স্কুলের মাঠ সংস্কার। রাস্তা দুটির প্রকল্প সভাপতি ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান নোমান মিয়া। আর মাঠ সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন লাখাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আলম। এ কাজগুলোও নামেমাত্র করা হয়েছে। ফলে রাস্তায় চলাচলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে।

একই প্রকল্পের মাধ্যমে বুল্লা ইউনিয়নে দুটি রাস্তার কাজ করা হয়েছে। যার জন্য ১৪৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে বলাকান্দি থেকে হাওরের রাস্তা পর্যন্ত এবং গোয়াখাড়া থেকে বুল্লা বাজার আসার পাকা রাস্তা পর্যন্ত সংস্কার। রাস্তাগুলোর কোনো সংস্কার কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি।

প্রকল্প দুটির সভাপতি ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ। তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কোনো কাগজপত্র কিছুই তার কাছে সংরক্ষিত নেই। এগুলো পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) অফিসে জমা দিয়েছেন।

কাজের কোনো কাগজপত্র নিজের কাছে সংরক্ষিত নেই জানিয়ে করাব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, তিনি রাস্তা দু’টির কাজ করেছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ মিথ্যা।

কাবিখা প্রকল্পের কাজ শেষে সব কাগজপত্র তারা পিআইও অফিসে জমা দিয়েছেন বলে জানান মুড়িয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান নোমান মিয়া। তিনি বলেন, কাগজপত্র তারা সংরক্ষণ করেন না। তবে সঠিকভাবে কাজ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

লাখাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ফাইলটি আমার অফিসে নেই। আমি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ অফিসে যোগ দিয়ে ৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। যে কারণে ওই বিশেষ প্রকল্পের ফাইলটি কোথায় আছে তা আমার জানা নেই।’

এ সময় পিআইও নিজের অফিস সহকারীর কাছে ফাইলটি কোথায় জানতে চাইলে অফিস সহকারী উত্তরে বলেন, ‘আমার আগে যিনি অফিস সহকারী ছিলেন তিনি আমাকে যে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন আমি সেগুলোই আপনাকে দিতে পেরেছি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আমি অফিস সহকারী ছিলাম না।’

এর আগেও প্রকল্পে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান ও বামৈ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুনকে কারাগারে যেতে হয়।

এফএ/এমএস