বিকল্প সড়ক না করে সেতু নির্মাণ, ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে নওপাড়ায় পোড়াগঙ্গা খালের ওপর বেইলি সেতু ভেঙে সড়কে চলছে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ। তবে নদী পারাপারে ব্যবস্থা করা হয়নি বিকল্প কোনো সড়কের। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটে চলাচলরত যাত্রী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। বিশেষ করে আলু উত্তোলন মৌসুম শুরু হওয়ায় স্থানীয় দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক পণ্য বাজারে ও হিমাগারে পাঠাতে পড়ছেন বিপাকে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চার কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে কুসুমপুর-মালিরঅংক সড়কের নওপাড়া এলাকায় পোড়া গংঙ্গা খালের ওপর ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ পায় আলী কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গতবছরের নভেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ মাস বিলম্বে চলতি মাসে শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ। যা শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের মার্চে।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরাতন স্টিলের বেইলি সেতু ভেঙে নতুন নির্মানাধীন সেতু এলাকায় খাল বন্ধ করে দড়ি টেনে পাইলিং বসানোর কাজ চলছে। সামান্য মাটি কেটে খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। খাল দিয়ে নৌকা বা ট্রলার চলাচলের স্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি নেই। মানুষের চলাচলের জন্য পাশে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় এবং নদীপথটিতেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভারী যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ২-৩ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কাজীর বাগ সড়ক হয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলার অন্তত এক লাখ মানুষের। সিরাজদিখানের কুসুমপুর, ইছাপুরা, খিলগাঁও ও পাশের উপজেলা শ্রীনগরের কুড়ারবাগ, পানিয়া তন্তুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবছর আলু উত্তোলন মৌসুমে ২-৩ লাখ বস্তা আলু নওপাড়া এলাকার বিভিন্ন হিমাগারে পরিবহন করা হয়। সড়কটি বন্ধ থাকায় এসব এলাকার উত্তোলিত আলু পরিবহনে খরচ বেড়েছে কৃষকের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনেও দেখা দিয়েছে ভোগান্তি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর খান বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য স্থানীয় দোকানদাররা এ সড়কটি ব্যবহার করেন। এখানে রড-সিমেন্ট, টিনসহ বিভিন্ন ভারী পণ্যের দোকান-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক এলাকা ঘুরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে সেতুর উত্তর প্রান্তের মালিরঅংক এলাকা দিয়ে।’
আলুচাষি আব্দুর রব বেপারী বলেন, ‘আগে যেখানে এক বস্তা আলু ক্ষেত থেকে নওপাড়ার হিমাগারগুলোতে পরিবহনে ৩০ টাকা লাগতো, এখন নওপাড়া-কুসুমপুর সড়ক বন্ধ থাকায় বিকল্প পথ ঘুরে আসতে প্রতিবস্তায় ২০ টাকা খরচ বেড়েছে। আশপাশে আর কোনো হিমাগার না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে।’
নওপাড়া হিমাগারের ব্যবস্থাপক এনামুল কবির লিটন বলেন, মৌসুমে নওপাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশের ১০-১৫টি এলাকা থেকে স্থানীয় হিমাগারগুলোতে ২-৩ লাখ বস্তা আলু আসে। কিন্তু এবছর সড়কটি বন্ধ থাকায় আলু তেমন আসছে না। কৃষকরা বেশি টাকা খরচ করে দূর-দূরান্তের হিমাগারে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের পরিবহন খরচ বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।’
বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নায়েব আলী কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আহমেদ খান বলেন, ‘এলজিইডি থেকে আমাদের যে ডিজাইন সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা নেই।’
কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়দের অনুরোধ ও বেশকিছু বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই।
এলজিইডির লৌহজং উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইয়াসিন আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পটি গ্রহণ করার সময় উপজেলা মিটিংয়ে আমরা বিকল্প সড়কের প্রস্তাবনা রেখেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যানের আপত্তির কারণে বিকল্প সড়ক রাখা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সিকদার বলেন, ‘সেতুর কাজ কীভাবে করবে না করবে সেটা এলজিইডির ব্যাপার। আমি এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার কেউ না। তাছাড়া, আমি কোনো মিটিংয়েও একথা বলিনি।’
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হবে।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর/জিকেএস