চুয়াডাঙ্গায় অসহ্য গরমে ডাবের দামেও আগুন
চুয়াডাঙ্গায় বেশ কয়েকদিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান। আপাতত তাপমাত্রার পারদ নামার কোনো সম্ভাবনাও নেই। দাবদাহের ফলে অসহ্য গরমে কাহিল মানুষ। এই গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ডাবের ভূমিকা বেশ। তাইতো এ সময় পানীয় হিসেবে ডাবের পানি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
তবে এই গরমে ডাবের অতিরিক্ত দামের কাছে অসহায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ। বর্তমানে ডাবের চাহিদাও আকাশচুম্বী। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজার ও অসহনীয় গরমে সুযোগ নিচ্ছে ডাব ব্যবসায়ীরাই। তাদের অপতৎপরতায় ৭০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর ৮০-৯০ টাকার ডাব বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। অর্থাৎ এই গরমে ডাব বিক্রেতাদের পোয়াবারো।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর (চৌরাস্তা) মোড়, নিচের বাজার, রেল বাজার, পুরাতন জেলখানা মোড়, সদর হাসপাতাল রোডের উপশম মোড়, কবরী রোডের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড়, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার মোড় ও একাডেমি মোড়সহ শহরের যে কয়টি স্পটে ডাব বিক্রি হয় প্রত্যেকটি স্পটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ডাবের খুচরা মূল্য আকার ভেদে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রকারভেদে এই ডাবের দাম ৭০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে বর্তমান বাজারে দর হওয়ার কথা ছিল।
চুয়াডাঙ্গাসহ জেলার উপজেলা শহরের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছোট-বড় ডাব খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গড়ে ৪০-৫৫ টাকায় বিক্রি করতেন। এখন সেটা বেড়ে গড় দাম ৮০-১০০ টাকায় ঠেকেছে। যেমন বড় ডাব ১০০-১১০ টাকা, মাঝারি ৯০-১০০টাকা এবং ছোট ডাব ৮০-৮৫ টাকায় ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে। যার ফলে ১০০ থেকে ১২০ টাকার কমে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন না।
ব্যাটারি চালিত পাখিভ্যানের চালক মিথুন মিয়া বলেন, ডাব কিনলাম একটা, ছোট্ট ডাব। সেই ডাবে দুই ঢোক পানি আর দাম ১০০ টাকা। কি করবো, কিছু করার নাই।
ডাব কিনতে আসা আলমগীর কবির শিপলু বলেন, গত সপ্তাহেও মাঝারি সাইজের ডাব কিনেছি ৭৫ টাকায়। এটা এখন দেখি ১০০ টাকা হয়ে গেছে। বড়টা তো ১২০ টাকা। দাম এত বেড়েছে যে কিনতেই ইচ্ছা করছে না। আবার যে গরম ডাব না খাইলেও সমস্যা।
ডাব কিনতে আসা আল মারুফ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই ডাডের দাম বাড়ছে। বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম যেমন বেশি, সেইসঙ্গে ডাবের দামও বেশি। ডাব কিনে খাওয়ার উপায় নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সম্রাট বলেন, গরম বেড়েছে বলে অনেক ব্যবসায়ী ডাবের দাম বাড়িয়েছে। এই গরমে ডাব খাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। এটা বুঝেই ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের সুযোগ নিচ্ছে।
ডাব বিক্রেতা চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খুচরা ডাব ব্যবসায়ী তাইজেল আলী বলেন, ডাবের পাইকারি দর এখন বেশি। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। মানুষের চাহিদা আগের তুলনায় বেশি। তবে সরবরাহ যদি বাড়ে তাহলে দামও কমে যাবে।
শহীদ হাসান চত্বরের খুচরা ডাব বিক্রেতা হারুন আলী বলেন, ভাই, ডাব পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাচ্ছি দাম বেশি হওয়ায় কাস্টমাররা দরদাম করছে। দাম বেশি নেওয়ায় পরিচিতরাও রাগ করছে। আমাদের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৮০-৯০ টাকায় ডাব কিনতে হচ্ছে। যার ফলে বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে।
জানা যায়, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ডাব ছাড়াও ডাবের একটি বৃহৎ অংশ খুলনা ও মাগুরা থেকে আমদানি করা হয়। যাতে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলার মানুষের ডাবের চাহিদা মিটে থাকে।
কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, স্থানীয়ভাবে যারা ডাব সংগ্রহ করে আনছেন, তারা আড়তে বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছেও বেশি দামে বিক্রি করছেন। যার ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের চৌরাস্তা মোড়ের পাইকারি ডাব বিক্রেতা শিমুল হোসেন বলেন, প্রায় সব অঞ্চলে এখন ডাবের গাছ কমে যওয়ার কারণে চাহিদা মিটছে না। ফলে ডাবের দাম বেশি। যারা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করছে তারাও বেশি নিচ্ছে। আর আমরাও বাধ্য হয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছি। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের একটু বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।
এদিকে ডাবের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, এরইমধ্যে আমরা কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে মূল্য তালিকা টাঙাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে ডাব কিনছে, তার ভাউচার সংরক্ষণ করতে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত দামের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযানও অব্যাহত থাকবে।
এফএ/এএসএম