ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একদিন ভালো খাওয়াটাই তাদের কাছে ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | বগুড়া | প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ১১ এপ্রিল ২০২৪

বগুড়া শহরের হাড্ডিপট্টিতে রেল লাইনের কোল ঘেঁষে ১৮টি কুড়েঘর। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হবে ইট-পাথরের দালানের মাঝে কবি জসিম উদ্দিনের লেখা আসামনি কবিতার সেই নিভৃত পল্লী। এই পল্লীতে যারা বসবসা করে তারা সমাজে ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে পরিচিত। কেউ কাগজ কুড়ান, কেউ ভিক্ষা করেন আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করের।

পবিত্র রমজান শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় খুশির উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ মানেই নতুন পোশাক পরে নামাজ পড়া, বড়দের কাছ থেকে সালামি আদায় করা, সেমাই-পায়েস খাওয়া, স্বজন-বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। ঈদকে ঘিরে সবখানে আনন্দের আমেজ বিরাজ করলেও রেল লাইনের পাশের এই পল্লীতে কোনো উচ্ছ্বাস নিয়ে আসতে পারেনি ঈদ।

এই পল্লীতে শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠেছেন জরিনা বেগম। এখন তিনি তিন সন্তানের জননী। স্বামী ও ছেলেদের নিয়ে বসবাস করেন পলিথিন আর বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি কয়েকবর্গ ফুটের একটি ঘরে। ঈদুল ফিতরে পরিবারকে নিয়ে কেমন আয়োজন জনাতে চাইলে মলিন হাঁসি দিয়ে জরিনা বলেন, ‘হামাকেরে আবার ঈদ? সারাবছরের মতো আলু আর কচুভর্তা দিয়েই ঈদ পাড়ি দিবো।’

একদিন ভালো খাওয়াটাই তাদের কাছে ঈদ

করুণ কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ভালোমন্দ খাইলেও ঈদ হবে, না খাইলেও ঈদ হবে। খারাপ লাগে তিন ছেলের জন্য। তাদের একজনের বয়স ৪, আরেকজনের ৯ ও সবার বড়জনের বয়স ১১ বছর। ওরাতো এখনও ছোট মানুষ। ঈদে না পারি তাদের ভালো মন্দ খাওয়াতে না পারি কাপড় চোপড় কিনে দিতে। কাগজ কুড়ায়ে দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। স্বামী ঠিকমতো কিছু করে না। এজন্য অনেক কষ্টে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারি মাত্র। তাই ঈদ নিয়ে বাড়তি ভাবনা বা কোনো আনন্দও নেই।

জরিনার দুই ঘর পরেই স্ত্রীকে নিয়ে কুড়েঘরে থাকেন সাজু মিয়া। সারিয়াকান্দি উপজেলার এই বাসিন্দা যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে শহরের হাড্ডিপট্টির এই পল্লীতে বাসবাস করে আসছেন। রাজমিস্ত্রির কাজের যোগানদাতা সাজুর ডান পা ভাঙা থাকায় গত একমাস যাবত তিনি কোনো কাজে যেতে পারেননি। স্ত্রী অঞ্জু আরা ভিক্ষা করে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে দুইবেলা খেয়ে পরে বেঁচে আছেন তারা৷

সাজু বলেন, ঈদ নিয়ে আমাদের আলাদা কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। ঈদে কখনোই নতুন পোশাক আমার বা স্ত্রীর ভাগ্যে জোটেনি। কোনো ব্যক্তি যদি ভালোমন্দ দিয়ে যায় তাহলে ঈদে ভালোমন্দ খেতে পারি৷ এইবার রোজার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেউই আমাদের খোঁজখবর রাখেনি। এনিয়ে কোনো আপসোসও নেই। প্রতিদিনের মতো ঈদের দিনও ভাত-ভর্তা খেয়ে থাকবো।

ঈদ কেমন কাটছে জিজ্ঞাসা করতেই কাদের নামের এক কিশোর বলে উঠলো, আমাদের আবার কিসের ঈদ। দুই বেলা ঠিক করে খাইতে পারি না। আবার ঈদের কেনা-কাটা কিসের। কোনোদিন একবেলা ভালোমন্দ খাইতে পারলেই ঈদের শান্তি লাগে। গত ঈদে এক বড়লোক সাহেব আমাদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েছিল। এবার কিছু পাই নাই।

নতুন কাপড়ের প্রসঙ্গ তুলতেই হেসে দেন কোরবান নামের এক ব্যক্তি৷ তিনি বলেন, গত তিন বছরেও কোনো নতুন কাপড় কিনেছি কিনা মনে নেই৷ যেখানে ঈদের দিন দুইবেলা ভাত পাই কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ সেখানে নতুন কাপড়ের চিন্তা কই থেকে করবো? স্ত্রীকে নিয়ে ডাল-ভাত খেতে পারলেই খুশি৷

সারা দেশের মানুষ যখন ঈদের আনন্দ-উৎসবে ব্যস্ত তখন বগুড়া শহরের এই পল্লীতে বসবাসরত এসব ছিন্নমূল মানুষের তিন বেলা খাবার জুটছে না।

বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সরকার বলেন, তাদের প্রয়োজনগুলো শুনে ঈদ আনন্দময় করতে সবরকম চেষ্টা থাকবে।

এফএ/এমএস