ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঈদে বাড়িফেরা

মেরামত করে ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে নামানোর তোড়জোড়

শাওন খান | প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

ঈদে ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে নামানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন বরিশালের চালক ও মালিকরা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে ফিটনেসহীন এসব গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। পুরোনো এসব গাড়ি রঙ করে নতুন রূপে ফেরাতে ব্যস্ত মিস্ত্রিরা।

ওয়ার্কশপ থেকে সৌন্দর্য বর্ধন করে গাড়িগুলো রাস্তায় নামানোর পর দেখে বোঝার উপায় নেই এসব গাড়ির করুণ দশা। এ গাড়িগুলো রাস্তায় নামার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে বরিশাল-কুয়াকটা মহাসড়কের পাশে রুপাতলি এলাকাসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপে দেখা গেছে, লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো মেরামতের কাজ চলছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো ঝালাই করে জোড়াতালি দিচ্ছেন মিস্ত্রিরা। পুরনো গাড়ি মেরামতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কোনও গাড়ির ইঞ্জিন সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে, কোনও গাড়ির ব্রেক ও ইঞ্জিনে সমস্যা আবার কোনোটির সিট ছেঁড়া। আবার কোনও গাড়ির বডিতে নেই রঙ। ঈদের সময় বহু পুরোনো এসব গাড়ি মেরামত করে নতুন সাজে রোডে নামানোর জন্য আনা হয়েছে ওয়ার্কশপে। ঈদের ৪-৫ দিন আগেই এসব গাড়িতে রঙ মাখিয়ে নতুন রূপে সড়কে নামানো হবে। সেইসঙ্গে ঘরে ফেরা মানুষ পরিবহনে ব্যবহার করা হবে।

মেরামত করে ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে নামানোর তোড়জোড়

নগরীর রুপাতলী মায়ের দোয়া ওয়ার্কশপে পুরোনো গাড়ির বডিতে রঙের কাজ করা মিস্ত্রী আব্দুল হালিম জানান, ঈদ সামনে রেখে পুরনো গাড়িগুলো রঙ করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। যাতে যাত্রীরা আকৃষ্ট হন। সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করছেন তারা।

এ ওয়ার্কশপের মালিক ফরিদুল ইসলাম জগো নিউজকে বলেন, পুরোনো গাড়িগুলো মেরামত শেষে ২৫-২৬ রোজার মধ্যে কীভাবে ডেলিভারি দেওয়া যায়, সে চিন্তায় আছি। তাই রাতদিন কাজ করছি। নতুন-পুরাতনসহ সব ধরনের গাড়ির মেরামতের কাজ আমাদের এখানে হচ্ছে।

রাজিব অটো ওয়ার্কশপের মালিক রাজিব খান বলেন, এবারের ঈদে গাড়ির কাজ কম হচ্ছে। বর্তমানে যেসব গাড়ি আমরা মেরামত করছি, সেগুলোর বেশিরভাগই পুরানো। ঈদের দুই-চার দিন আগে রঙের কাজ শেষ করে গাড়িগুলো মালিকদের কাছে ডেলিভারি দিতে হবে।

গাড়ি মেরামতের কারিগর মনির খান জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের সময় পুরাতন গাড়ির কাজ সবচেয়ে বেশি। ইঞ্জিনে ত্রুটি, বডিতে রঙ নেই, সিটকাভার নষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে মালিকরা গাড়িগুলো গ্যারেজে নিয়ে আসেন। আমরা সেগুলো মেরামত করে নতুনভাবে সাজিয়ে দিলে বোঝাই যাবে না, গাড়ি পুরাতন ছিল।

ওয়ার্কশপে আসা বাসচালক ছাইদুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের সময় প্রত্যেক যাত্রী রঙ করা সুন্দর গাড়িতে উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। চাহিদাও বেশি থাকে। তাই বাসের ভেতরের সিট ও বডিতে রঙের কাজ করার জন্য আনা হয়েছে। ঈদের সময় গাড়ির ফিটনেস না থাকলে পুলিশ ও সার্জেন্টরা আটক বা মামলা করেন। তাই রঙ করা হচ্ছে। সারা বছরের চেয়ে ঈদের সময় কিছু বাড়তি টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য গাড়িগুলো দ্রুত মেরামত করছি আমরা।

মেরামত করে ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে নামানোর তোড়জোড়

একইভাবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপে জোরেশোরে পুরোনো গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। কেউ বাসে রঙ করছেন, কেউ ইঞ্জিন খুলে বসেছেন, আবার কেউ সিট ও বডির কাজ করছেন।

তবে ওপরে রঙ লাগিয়ে এসব গাড়ি সড়কের নামানোর পরে বিকল হয়ে যায় বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ফলে রঙ মাখা এসব গাড়ির কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষজন রাস্তায় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সেইসঙ্গে এসব গাড়ির বেহাল দশার কারণে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা।

রুপাতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, রঙ মাখিয়ে পুরোনো গাড়িগুলো রোডে নামানোর ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আসলে এ গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এরই মধ্যে মহাসড়কে টেম্পু, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বেড়ে গেছে। এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচল বন্ধ না হলে ঈদে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বরিশালের পরিচালক জিয়াউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ পুরানো বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া উৎসবের সুযোগে কেউ ফিটনেসবিহীন বাস নামানোর পাঁয়তারা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির জানান, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করছি। তাছাড়া এবার পরিবহন সেক্টরের সকাল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে ফিটনেসহীন বাস না নামাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরও এসব বাস চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শাওন খান/এনআইবি/জিকেএস