ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে নেই দম ফেলার ফুরসত

এম এ মালেক | সিরাজগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০২৪

আর কদিন পরেই ঈদুল ফিতর। এ ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে খট খট শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লি। লুঙ্গি-গামছার সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে কাতান ও বেনারসি শাড়ির। ফলে দম ফেলানোর সময় নেই তাঁতিদের। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চোখজুড়ানো তাঁতপণ্য তৈরি করছেন তারা। এ কাজ চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ তাঁতশিল্পের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। এ জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম তাঁত চালু রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলায়। এসব উপজেলায় তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা। এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।

জেলার বেলকুচি পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘তাঁতপল্লি’ নামে। এখানে তৈরি হচ্ছে বেনারসি, কাতান ও জরি-চুমকির শাড়ি। এসব শাড়ির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।

সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে নেই দম ফেলার ফুরসত

রোববার (৩১ মার্চ) বেলকুচি উপজেলা তামাই ঘুরে দেখা যায়, খট খট শব্দে মুখর। প্রতিটি তাঁতই চালু। তাঁতিরা বুনছেন লুঙ্গি ও শাড়ি। অন্যদিকে হ্যান্ডলুম তাঁত ঘরে ব্যস্ত তাঁতিরা। হাত-পা চলছে সমানতালে। কথা বলার ফুসরত নেই তাদের।

কথা হয় বেলকুচি গ্রামের তাঁত মালিক রহমত আলীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রং-সুতার দাম চড়া। একের পর এক বন্ধ হচ্ছিল তাঁত। করোনাকালে এ পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করেছিল। কর্মব্যস্ত তাঁতপল্লি হয়েছিল নীরব-নিথর। অনেকে তাঁত বন্ধ করে বদলেছিলেন পেশা। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে আবার অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা টিকে রাখতে চেষ্টা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘কারোনার সময়ে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়লেও চাহিদা ছিল কম। কিন্তু এবার আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেই পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকেই তাঁতপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে এখন রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে তাঁতিদের।’

সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে নেই দম ফেলার ফুরসত

একই উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের তাঁতশ্রমিক ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে পরিশ্রম করছি, সে তুলনায় আমাদের মজুরি অনেক কম। ছয়দিন কাজ করলে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা মজুরি পাওয়া যায়। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না।’

তাঁতশ্রমিকদের মজুরি এতো কম কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তামাই গ্রামের তাঁত মালিক আব্দুল হাকিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ভালো না। ঋণ করে বাপ-দাদার ব্যবসা চালু রেখেছি। রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য আমরা খুব একটা লাভবান হতে পারছি না। তাই মজুরি কম। মজুরি কমের কারণে শ্রমিক সংকট রয়েছে।’

বেলকুচি হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ভালো শাড়ি তৈরি করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বেলকুচির তাঁতের শাড়ি পরেন। এ শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে নেই দম ফেলার ফুরসত

সিরাজগঞ্জ জেলা হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, এ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে ঈদকে কেন্দ্র করে যে লুঙ্গি বা শাড়ি উৎপাদন করা হয় তা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেই অনুপাতে কম সাড়া পাচ্ছি। ঈদে শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রির যে রমরমা ভাব সেটা নেই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সিরাজগঞ্জে দায়িত্বরত ফিল্ড সুপারভাইজার ইমরানুল হক জাগো নিউজকে বলেন, রং-সুতার মূল্যবৃদ্ধিতে তাঁতিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে আমরা এ ক্ষতি পোষাতে তাদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছি। এতে তাঁতপল্লিগুলোতে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

এসআর/এমএস