হঠাৎ বৃদ্ধির পর জয়পুরহাটে কমতে শুরু করেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
রমজানের শুরু থেকেই জয়পুরহাটে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) একদিনেই ভর্তি হন ১৮৩ জন। যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। তবে এক সপ্তাহের তুলনায় শুক্রবার (২২ মার্চ) রোগী কমেছে। এদিন ১২ জন রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬২ জন।
শুক্রবার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা বেড ও ফ্লোরে শুয়ে সেবা নিচ্ছেন। কেউ একদিন আবার কেউ তিন-চারদিন ধরে হাসপাতালে আছেন। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। তারা প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভুগছেন।
জয়পুরহাটের জানিয়ার বাগান এলাকার সাইদুল ইসলাম (৩২) বলেন, বৃহস্পতিবার আমি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই।
ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পৌরসভার সরবরাহ করা সাপ্লাই পানি খেয়ে থাকি। আর এ পানি পান করার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি বলে মনে হচ্ছে।
বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা রাইহান তার আট বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। প্রথমে পেটে ব্যথা, এরপর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সঙ্গে বমিও। আমার ধারণা, পৌরসভার সরবরাহ করা পানির কারণেই আমার ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
ধামইরহাট থেকে আগত শিউলী বেগম (৬০) বলেন, আমি দুদিন ধরে ভর্তি আছি। আমি বাহিরের ভাজাপোড়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
কেমন সেবা পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী বেশি হলেও সেবায় কোনো কমতি নেই। ডাক্তার ও নার্সরা পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের আরএমও ডা. শহীদ হোসেন বলেন, রমজানের শুরুতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। দু’তিনটা রোজা অতিবাহিত হওয়ার পর ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। আমাদের লোকবল কম থাকার পরেও আমরা ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করছি।
ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, পৌরসভার পানি সাপ্লাইয়ের লাইন ফেটে যাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। আমরা পানি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট হাতে পেলে নিশ্চিত জানা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত রোগীদের ‘হেলথ এডুকেশন’ প্রদান করছি। এটা ভাইরাসজনিত রোগ। এর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই। আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিক দিই তা সেকেন্ডারি সমস্যাকে দূর করার জন্য। মূলত পানিশূন্যতা রোধ করতে হবে। খাবার স্যালাইন, ডাব, কলেরা স্যালাইন, ভাতের মাড়, চিড়া ও কলা খেতে হবে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রাফসান জনি বলেন, ডায়রিয়া রোগীর ডায়রিয়ার পাশাপাশি জটিল কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতা রোধ না করতে পারলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। সোডিয়ামের ঘাটতির ফলে স্মৃতি লোপ ও পটাশিয়ামের ঘাটতির ফলে হার্টঅ্যাটাকও হতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমণের ফলে দুই পা অবশ হতে পারে।
এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, সঠিক পদ্ধতিতে পানিস্বল্পতা দূর করতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি প্রয়োজনে কলেরা স্যালাইন নিতে হবে। ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে। বাহিরের খোলা খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপের পরিপ্রেক্ষিতে জয়পুরহাট পৌরসভা একটি ঘোষণায় জানায়, পৌরসভার রাস্তা সম্প্রসারণ কাজের কারণে পানির লাইনের পাইপ কেটে বা ফেটে যাওয়ায় সরবরাহ করা পানি দূষিত হতে পারে। এজন্য গ্রাহকদের সাময়িকভাবে পানি ফুটিয়ে পান করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এফএ/এমএস