ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অপরিপক্ব তরমুজে সয়লাব বাজার, ঠকছেন ক্রেতারা

উপজেলা প্রতিনিধি | বেনাপোল (যশোর) | প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৪

যশোরের শার্শা-বেনাপোলে চড়া দামে অপরিপক্ব তরমুজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। গরমের মধ্যে রোজায় রসালো ফলটির চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আড়তে অপরিপক্ব তরমুজ সরবরাহ করছেন ফড়িয়ারা। কম দামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহীত এসব অপরিপক্ব তরমুজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। এতে ব্যবসায়ীরা লাভ গুনলেও বাড়ি নিয়ে কাটার পর লালের বদলে তরমুজের ভেতরের রং সাদা দেখে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।

গরম ও রোজায় তরমুজের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হবে এমনটি আঁচ করতে পেরে আড়তে তরমুজ তোলেন শার্শা-বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা থেকে আড়তে তরমুজ নিয়ে আসেন ফড়িয়ারা। নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনের বিনিময়ে আড়তদাররা এসব তরমুজ পিস হিসেব খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে একদম ছোট আকৃতির ১০০ পিস তরমুজ ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এসব তরমুজের একেকটির ওজন তিন কেজির ওপর। মাঝারি আকৃতির তরমুজের ১০০টির দাম ২৫-৩০ হাজার। এগুলোর প্রতিটির ওজন ৬-৭ কেজি। আড়তে সবচেয়ে বড় আকৃতির ৮-১০ কেজি ওজনের তরমুজের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, চারা রোপণের ৬০-৬৫ দিন পর তরমুজ পরিপক্ব হয়। এর আগে তরমুজ তোলা হলে সেগুলো পুরোপুরি পাকে না। ভেতরে লাল ও সাদা মিলিয়ে থাকে।

তিনি জানান, তরমুজ কেনার সময় চাপ দিয়ে দেখতে হয় ‘ঢ্যাপ ঢ্যাপ’ শব্দ হয় কি না। যেসব তরমুজের খোসার ওপর মসৃণ ও রং উজ্জল থাকে সেগুলো সাধারণত পাকা হয় না। আর যেসব তরমুজ গোলাকৃতি, সেগুলো বেশি মিষ্টি।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ জানান, ইফতারিতে খাওয়ার জন্য বেনাপোল বাজার থেকে কেজি দরে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি তরমুজ কেনেন। পরে বাড়ি নিয়ে গিয়ে কেটে দেখেন ভেতরে বেশিরভাগই কাঁচা। তরমুজের বিচিগুলোও অপরিপক্ব।

আরও পড়ুন 

ফলের দোকান ও আড়ত ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে তরমুজ বিক্রি বেশি হলেও এখন ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বেশি দামের কারণে একমাত্র সামর্থ্যবানরা ছাড়া সব শ্রেণির ক্রেতারা তরমুজ কিনছেন না। এতে তাদের ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিয়েছে।

অপরিপক্ক তরমুজে সয়লাব বাজার, ঠকছেন ক্রেতারা

বেনাপোলের ফল ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, বড় আকৃতির তরমুজ কিনে তাদের এখানকার অনেক আড়ত ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। খুচরা বাজারে বিক্রি না হওয়ায় সেসব তরমুজ আড়তে পড়ে আছে। তরমুজ পচনশীল। আরও কিছুদিন এভাবে পড়ে থাকলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি জানান, সমিতির পক্ষ থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ তা শুনছেন না। ১০ রোজার পর থেকে ফলের চাহিদা আরও কমে যাবে। তখন ফল ব্যবসায়ীরা বসে বসে কান্নাকাটি করবেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করায় তরমুজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এতে ব্যবসায়ে এখন খারাপ প্রভাব পড়ছে।

রূপদিয়ার পাইকারি বাজারের আমতলি ফল ভান্ডারের পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ কিনতে এখানে ভিড় করছেন। পুরোপুরি পাকা না হলেও তারা তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে তারা দায়ী না।

যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রি একদম অন্যায়। মনিটরিং করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাযথ পণ্য সরবরাহ না করাটা অপরাধ। অপরিপক্ব তরমুজ কিনে কেউ প্রতারিত হলে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবেন। তবে এক্ষেত্রে তরমুজ কেনার রসিদ থাকতে হবে। সেটি না থাকলে কোনো বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ ও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

জামাল হোসেন/এসআর/জিকেএস