নোয়াখালীতে এবার এমপি কিরনের বিরুদ্ধে মন্দির কমিটির মামলা
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চৌমুহনী শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউর আখড়া মন্দিরের পরিচালনা কমিটি। বুধবার (২০ মার্চ) সিনিয়র সহকারী জজ সখিনা আক্তার মামলাটি আমলে নিয়ে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন।
বেগমগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তা মো. বেলাল হোসেন মামলা ও আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, চৌমুহনী শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউর আখড়া মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চন্দ্র মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক গণেশ চন্দ্র কুরী বাদী হয়ে গত সোমবার (১৮ মার্চ) মামলাটি দায়ের করেন। এতে নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত দীনেশ সাহার ছেলে দীপক সাহা, একই এলাকার মৃত গোপীনাথ সাহার ছেলে ধীমান সাহা, মৃত হারান চন্দ্র ঘোষের ছেলে তপন ঘোষ, মৃত ডা. প্রফুল্ল কুমার পালের ছেলে অরবিন্দ পাল ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত অনন্ত পালের ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র পাল।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, সকলের সর্বসম্মতিক্রমে গত ২০২২ সালের ১৪ মে চার বছরের জন্য মন্দিরের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। আগামি ২০২৬ সালের ১৪ মে পর্যন্ত ওই কমিটির মেয়াদ চলমান আছে। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন গত ১৪ মার্চ নতুন কমিটি গঠনে নিজস্ব প্যাডে আসামিদের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে দায়িত্ব দেন। পরদিন ১৫ মার্চ দায়িত্বপ্রাপ্তরা চলমান মেয়াদ থাকা কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে রতন লাল সাহাকে সভাপতি এবং সুজন পালকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে। যাতে এমপি মামুনুর রশিদ কিরনের স্বাক্ষর রয়েছে।
তপন চন্দ্র মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যরা যে যার পছন্দমতো প্রার্থীকে সমর্থন করেন। এখন নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কিরন ক্ষিপ্ত হয়ে মন্দিরের বৈধ কমিটি বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী অবৈধ কমিটি গঠন করেছেন। এর বিরুদ্ধে মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সম্মতিক্রমে আমরা আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
গণেশ চন্দ্র কুরী বলেন, সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন মন্দির কমিটি গঠন বা বিলুপ্ত করতে পারেন না। শতবর্ষী এ মন্দিরে এর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মন্দির কমিটি নিয়ে তা হিন্দু কমিউনিটির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। এতে করে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের ঋণ পরিশোধে চৌমুহনী বড় মসজিদের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ৪ ডিসেম্বর জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এএসএম