ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পদ্মায় বালুমহাল ইজারা, নদীভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয়রা

বিধান মজুমদার | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৪

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের পদ্মা নদীর একটি অংশে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে ইজারা পেতে দরপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ পাঁচজন। আর দরপত্র যাচাইবাছাই করছে জেলা বালুমহাল ইজারা মূল্যায়ন কমিটি। তবে বালুমহাল ইজারা দিলে নদীভাঙনের পাশাপাশি হুমকিতে পড়বে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইজারা বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে উপজেলা পরিষদ।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা থেকে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের চরসেনসাস পর্যন্ত পদ্মা নদী বিস্তৃত। দীর্ঘদিন আগে থেকে নদীর দুই তীরে থাকা ৩টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রয়েছে। গত ৫ বছরে ভাঙন রোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ওইসব এলাকায় অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

সম্প্রতি ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের বাঘাইয়া মৌজার ১৫ দশমিক ৮৮ একর পদ্মা নদীর অংশে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে জেলা প্রশাসন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে শরীয়তপুরের ৫ জন বালু ব্যবসায়ী দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেন। গত ১১ মার্চ ওই দরপত্রগুলো উন্মুক্ত করা হলে নড়িয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মাহাবুব শেখ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চিহ্নিত হন।

তবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে কাচিকাটা, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া ও চরভাগা ইউনিয়নের বিশাল ভূখণ্ড। তাই বালুমহাল বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির।

পদ্মায় বালুমহাল ইজারা, নদীভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয়রা

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, ইলিশ মাছের নির্বিঘ্ন প্রজনন ও বেড়ে ওঠার জন্য মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের যে ৬টি স্থানকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে তার একটি স্থান পদ্মা নদীর ভেদরগঞ্জের অংশের ১৫ কিলোমিটার। বিভিন্ন সময় ওই অভয়াশ্রমে সকল ধরনের মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন যে স্থানে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তা ইলিশের অভয়াশ্রমের মধ্যে পড়েছে।

চরভাগা এলাকার আহম্মেদ শাকিল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙনের শিকার হয়ে আসছি। বর্তমানে আমরা নদীভাঙা মানুষেরা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কারণে অনেকটা স্বস্তিতে ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম আমাদের এই এলাকায় নাকি বালুমহালের ইজারা দেওয়া হবে। এতে আমরা আগের মতো নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো। আমরা চাই এই বালুমহাল ইজারা বাতিল করা হোক।

ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমীন বলেন, আমরা নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছি। প্রতিবছর শত শত বিঘা ফসলি জমি ও শত শত বসতবাড়ি বিলীন হয়। পদ্মার ভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বালুমহাল ইজারা দিলে ভাঙন আরও বাড়বে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ইলিশের বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই স্থানে বালুমহাল থাকলে ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হবে। তখন ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

পদ্মায় বালুমহাল ইজারা, নদীভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয়রা

ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বলেন, পদ্মার তীরবর্তী এলাকার মানুষ সবসময় ভাঙন বিপর্যয়ের মধ্যে থাকেন। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে ভাঙন বেড়ে যাবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলায় একটি বালুমহাল ইজারা দেওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চল নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। পরে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে ওই বালুমহাল বন্ধ করা হয়েছে। তাই আমাদের জেলায়ও বালুমহাল ইজারা না দিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ভেদরগঞ্জের পদ্মা নদীর চরভাগা ইউনিয়ন থেকে তারাবুনিয়া পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আর বালুমহালের প্রস্তাবিত স্থান নদীর উত্তর প্রান্তে। তার ভাটি ও উজানে কিছু এলাকা নদীভাঙনপ্রবণ।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের মুঠোফোনে কল করলে তিনি সংযোগটি কেটে দেন।

তবে আপাতত নদী ইজারা দেওয়ার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের জনগণ বালুমহাল চাচ্ছেন না, বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। তাই আপাতত সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস