ভোক্তার সঙ্কট কাটছে না অতিরিক্ত দায়িত্বে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদটি প্রায় দুই বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ‘দায়সারা’ ভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালাচ্ছেন রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আলী। এতে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ আর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ জনতা।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে সর্বপ্রথম সহকারী পরিচালক পদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ে দায়ত্ব পালন করেন কৃষ্ণপদ ঢালী। এরপর ২০২১ সালে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আব্দুস সালাম। তিনি ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বরে এই কার্যালয়ে যোগদান করেন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল অন্যত্র বদলি হন। এই কর্মকর্তার বদলির ১ বছর ১০ মাস ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কেউই এখানে নিযুক্ত হননি। এ সময়ের মধ্যে ৫ জন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা বদলি ও নিযুক্ত হয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই কার্যালয়ে ১৩ জন সহকারী পরিচলাক অদল-বলদ হয়েছেন। তারমধ্যে ১০ জনই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৯ মাসে ভোজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাত প্রতিরোধে গণসচেতনা তৈরিতে সাধারণ মানুষের মাঝে লিফলেট ও প্যাম্পলেট বিতরণ করেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব অপরাধ প্রতিরোধে ৩৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করায় ৬৫ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ লাখ ৭২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ভোক্তাদের দায়ের করা অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে ১৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, সেবাবঞ্চিত মানুষের আশা-ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও ভোক্তাদের বিষয়গুলো গুরুত্ব নিয়ে দেখেন এবং সমাধান করে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘদিন এখানকার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পদটি শূন্য রয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কোনো রকমে দায়িত্ব পালন করে দিন পার করছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় বাজারে তেমন অভিযান চোখে পড়ে না। এরই সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে অতিরিক্ত মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, এখানে একজন অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত আছেন। এই ভদ্রলোককে রাজশাহী থেকে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হয়। এটা দৈনন্দিন করা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই জেলা কার্যালয়ে শিগগির সহকারী পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মো. মাসুম আলী। তিনি রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, বিভাগীয় জেলার পাশাপাশি অন্য আরেক জেলায় সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা হলেও সঙ্কটের মুখোমুখী হতে হয়। ভোক্তাদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এফএ/এমএস