৩১ বছর বয়সেও শিশুবেলা কাটেনি সমীরের
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে মো. আছর উদ্দিন সমীর। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম আছর উদ্দিন থাকলেও গ্রামের মানুষ ‘শিশু সমীর’ বলেই চেনেন তাকে। বর্তমানে সমীরের বয়স ৩১ বছর। তবে দেহের গড়ন ও চলাফেরা ঠিক শিশুর মতোই। বয়স বাড়লেও বাড়েনি তার উচ্চতা, বিকশিত হয়নি মন মানসিকতা।
যুবক বয়স চললেও সারাদিন ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা করে কাটছে জীবন। ছেলের এমন শিশুসুলভ আচরণে বাবা-মা আছেন দুশ্চিন্তায়। চিকিৎসাতেও কোনো উন্নতি হয়নি সমীরের।
জানা গেছে, সমীর উদ্দিনের জন্ম ১৯৯২ সালে। দিনমজুর বাবা আজিম উদ্দিন ও গৃহিণী আছিয়া বেগমের প্রথম সন্তান তিনি। ছোট ভাই বোন বিয়ে করে সংসার করছেন। অথচ সমীর এখনো শিশু।
সমীর উদ্দিনের মা আছিয়া বেগম বলেন, সমীর জন্মের পর থেকেই এমন। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তার বয়স ৩১ বছর হলেও সে কিছু বোঝে না। সংসার, বিয়ে, আত্মীয়-স্বজন কোনো কিছুই বোঝে না। সারাদিন ছোট ছেলে-মেয়ের সঙ্গে খেলাধুলা করে। রাগ উঠলে ছোট মানুষের মতো আচরণ করে। অনেক চিকিৎসা করেও কোনো ফল পাইনি। আমরা মরে গেলে ওর জীবন কীভাবে চলবে আল্লাহ জানেন।
সমীরের খেলার সাথী সিনথিয়া জানায়, সমীর আমার চাচ্চু হয়। চাচ্চু আগে বড় ভাইদের সঙ্গে খেলাধুলা করতো। এখন আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করি। সে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। কোনো মারামারি করে না।
সমীরের প্রতিবেশী আকবর আলী বলেন, সমীরের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকে দেখি সমীরের শরীরে কোনো পরিবর্তন নেই। ওর ছোট ভাই বিয়ে করে কর্মজীবন শুরু করেছে। তার বাবা-মা গরিব। একটা ঘরের মধ্যে বাবা-মা সবাইকে নিয়ে থাকেন। গ্রামের মানুষ যতটা পারি সাহায্য করি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করলে হয়তো সমীর ভালো থাকতে পারবে।
কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, এটি মূলত খর্বাকৃতির বাচ্চা। যাকে স্ট্যান্ডিং বেবি বলা হয়। মূলত পুষ্টির অভাবে জন্মগতভাবে এমন সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে যদি আমরা সন্তানের সঠিক চিকিৎসা করতে পারি তাহলে কিছুটা পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর সঠিক পরিচর্যা, আয়োডিনযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হলে খর্বাকৃতির বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এএসএম