ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সামুদ্রিক মাছ সংকটের শঙ্কা

অভিযানেও থেমে নেই জাটকা-পোনা নিধন

আসাদুজ্জামান মিরাজ | প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ০৭ মার্চ ২০২৪

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ চরগড়া বা সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। এই জালের ব্যবহারের কারণে দেশীয় ও বিরল প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। অবৈধ জালে এসব পোনা মাছ নিধনের কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের গভীরে জেগে ওঠা চরবিজয়, গঙ্গামতি, লেম্বুরবনসহ বিভিন্ন চরে অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। এই চরগুলোতে কমপক্ষে ৫০টি ঘোপ বা চরগড়া দিয়ে ইলিশের পোনাসহ শত শত প্রজাতির মাছের পোনা ধরা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় অসাধু জেলে। তবে সাধারণ জেলেরা মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ও ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের চরগড়া, ঘোপ, চিংড়ি, বেহুন্দি ও কারেন্ট জাল বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

জেলেরা জানান, কুয়াকাটা সৈকত থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বদিকে গঙ্গামতি এলাকায় সৈকতে প্রতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) বা চরগড়া দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হয়। দিনের বেলা ভাটার সময় এসব চরের নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে খুঁটি ও জাল গেড়ে রাখেন জেলেরা। এরপর রাতের বেলা ও ভোরে জোয়ারের পানিতে যখন গোটা চর পানিতে তলিয়ে যায় তখন জাল টেনে বিভিন্ন জাতের মাছ ও পোনা আটকে দেওয়া হয়।



মো. খলিল নামের এক জেলে জানান, প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ মাছ এই জালগুলোতে আটকে মারা যাচ্ছে তাতে কদিন পরে আমরা আর সাগরে মাছ পাবো না। গত দুই মাসে একেকজন জেলে যে পরিমাণ মাছের পোনা বিক্রি করছে তার বর্তমান মূল্য দশ লাখ টাকার উপরে। আর এই মাছগুলো যদি মাত্র দুইমাস পরে ধরা হতো তাহলে তার মূল্য থাকতো কয়েক কোটি টাকা। এটা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের সরকারের কাছে দাবি যাতে দ্রুত এইগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গঙ্গামতি গ্রামের জেলে হেলাল মৃধা জানান, এখানে যারা মাছ ধরে প্রশাসনের চেয়েও মনে হয় ক্ষমতা তাদের বেশি। কারণ তারা জায়গা ভাগ করে নিয়েছে, চাইলে যে কেউ জাল মেরে মাছ ধরতে পারে না। স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ না করে এই পোনা মাছ ধরা সম্ভব না বলেও জানান তিনি।

ওয়ার্ল্ডফিশ (ইকোফিশ-২) প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, যেভাবে অবাধে পোনা মাছ মারা হচ্ছে তাতে সমুদ্র মাছের সংকটে পড়বে দ্রুত। এখন পর্যন্ত আমরা যে কাজ করেছি তাতে অন্তত ৩০টি প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছি। এভাবে চলতে থাকলে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। জীববৈচিত্র্যের পয়েন্ট অনুসারে, এভাবে চলতে থাকলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে এবং জনসংখ্যার ১২ শতাংশ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সমস্যায় পড়বে। এগুলো বন্ধ করতে হলে সামগ্রীক সিস্টেমের পরিবর্তন করতে হবে। জাল তৈরির কারখানা, আড়ৎগুলোতে পোনা মাছ বিক্রি বন্ধ এবং প্রশাসনের সঠিক নজরদারি থাকতে হবে।

বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলেরা এই অবৈধ জালের ব্যবহারে বনের গাছ কাটছে। আমরা এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দিয়েছি। আমরা শিগগিরই আবারও ওই এলাকায় অভিযান চালাবো।

কলাপাড়া উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ জাল এবং পোনা মাছ আহরণকারীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। প্রতিটি জায়গায় আমরা একাধিকবার অভিযান চালালেও তাদেরকে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এই জায়গাগুলো শনাক্ত করেছি। এতদিন নদী পথে অভিযান চালানোর কারণে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এবারে আমরা কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় স্থলপথে আবার অভিযান পরিচালনা করবো, যাতে এই অসাধু জেলেদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আইনে বলা আছে আড়াই ইঞ্চি ফাঁসের নিচে সকল জাল অবৈধ। আমরা প্রতিনিয়ত মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে এই অবৈধ জালগুলো জব্দ করে ধ্বংস করছি। তারপরও আইনি ফাঁকফোকরে এই অসাধু জেলেরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের নৌযান ও জনবলের সংকট থাকায় এইসকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভবও হচ্ছে না।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কোনোভাবেই পোনা মাছ ধরার সুযোগ নেই, এগুলো ধ্বংসাত্মক কাজ। আমরা খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

এফএ/এএসএম