বেইলি রোডে আগুন
মাকে বলেছিলেন ‘বেতন পেয়ে বাড়ি আসবো’, ফিরলেন লাশ হয়ে
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় বেইলি রোডের বহুতল ভবনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিতে যোগদান করেন সাগর হোসেন (২১)। তিনি ওই ভবনের ক্লথিং ব্যান্ড ইপিলিয়ন শোরুমে কর্মরত ছিলেন। সাগর মাকে বলেছিলেন, বেতন পেয়ে ১০ তারিখে বাড়ি আসবেন। তবে জীবিত আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। তার মরদেহ যাচ্ছে বাড়িতে। বৃহস্পতিবারের (২৯ ফেব্রুয়ারি) অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান সাগর।
নিহত সাগর হোসেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। বিদেশে যাওয়ার জন্য চাকরি করে টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি। এর আগে অন্য জায়গায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন সাগর।
স্থানীয়রা জানান, সাগর হোসেন এইচএসসি পাস। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বাবা পেশায় দিনমজুর, মা গৃহিণী। বিদেশে গিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চেয়েছিলেন সাগর। এজন্য ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়ে টাকা জমাতে চেয়েছিলেন তিনি। বেতন থেকে পরিবারের জন্যও কিছু টাকা পাঠাতেন মাঝেমধ্যে।
আরও পড়ুন
ঢামেক থেকে ৪০ মরদেহ হস্তান্তর, মর্গে আছে আরও ৬
চুমুক রেস্টুরেন্টের দুই মালিক ও কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার আটক
পাশাপাশি কবরে শায়িত প্রবাসী কাউসারসহ পুরো পরিবার
সাগরের স্বজনরা জানান, গারদা শিলড সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনের ক্লথিং ব্যান্ড ইপিলিয়ন শোরুমে যোগদান করেছিলেন সাগর। সেখানে কর্মরত অবস্থায় আটকা পড়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
নিহত সাগরের বাবা হাসান আলী বলেন, ‘দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ছেলেকে লেখাপড়া করানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। বাড়ি থেকে টাকা জোগাতে পারিনি বলে সে ঢাকায় গিয়ে কিছু একটা করে টাকা জমানের কথা বলে। চার মাস আগে সে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। মাঝে মধ্যেই টাকা পাঠাতো। ওই ভবনে সে মাত্র তিন দিন আগে জয়েন করেছিল। শুক্রবার রাতে ১টার দিকে জলসা শুনে বাড়ি ফিরি। পরে শুনতে পাই আমার ছেলে পুড়ে মারা গেছে।’
মা সাবিনা খাতুন বলেন, ‘দুদিন আগে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে ১০ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল সাগর। আমি বলেছিলাম, টাকার দরকার নাই, তুমি বাড়ি চলে আসো। কিন্তু তার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেলো।’
হাদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন, সাগর আমাকে ‘দাদা’ বলে ডাকতো। শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় সাগর মারা গেছে। এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তাদের পরিবারটি খুবই অসহায়। আমি এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকবো।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/এএসএম